
দক্ষিণ এশিয়ার উত্তপ্ত ভূখণ্ড কাশ্মীর আবারও রক্তাক্ত। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে দীর্ঘদিনের বিরোধের এই উপত্যকায় নতুন করে শুরু হয়েছে সামরিক সংঘাত। ৬ মে মধ্যরাতে ভারতের পক্ষ থেকে পাকিস্তান শাসিত কাশ্মীর এবং পাকিস্তানের অভ্যন্তরে মোট নয়টি স্থানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছে ভারতের সরকার।
এই সামরিক অভিযানের নাম দিয়েছে ‘অপারেশন সিন্দুর’। ভারতের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, এসব স্থানে ‘সন্ত্রাসী ঘাঁটি’ গড়ে তোলা হয়েছিল, যেখান থেকে ভারতের মাটিতে হামলার ছক কষা হচ্ছিল। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভাষ্যমতে, কোনো সামরিক স্থাপনাকে নয়, বরং সন্ত্রাসবাদের ঘাঁটিকেই লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।
অন্যদিকে, পাকিস্তান জানিয়েছে একেবারে ভিন্ন চিত্র। দেশটির সেনাবাহিনীর মুখপাত্র মেজর জেনারেল আহমেদ শরিফ এক বিবৃতিতে জানান, ভারতের এই হামলায় একটি মসজিদসহ তিনটি স্থানে বিস্ফোরণ ঘটেছে এবং দুই শিশু সহ সাতজন নিরীহ মানুষ নিহত হয়েছেন। তিনি আরও দাবি করেন, পাকিস্তানি বাহিনী দুটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান এবং একটি ড্রোন গুলি করে ভূপাতিত করেছে।
কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ রেখা সংলগ্ন এলাকায় বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছে বলেও সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে। এর পাশাপাশি ভারতীয় সেনাবাহিনী জানায়, পুঞ্চ-রাজৌরি অঞ্চলের ভিম্বার গলিতে পাকিস্তান গোলাবর্ষণ করেছে।
এই উত্তেজনার পেছনে রয়েছে ২২ এপ্রিলের একটি ভয়াবহ ঘটনা। কাশ্মীরের পহেলগামে পর্যটকদের ওপর বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন নিহত হন। সেই ঘটনার রেশ ধরেই দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা ক্রমাগত বাড়ছিল।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী এক টেলিভিশন ভাষণে ভারতের হামলাকে “কাপুরুষোচিত আগ্রাসন” বলে আখ্যায়িত করে বলেন,
“শত্রুরা আমাদের অভ্যন্তরে পাঁচটি জায়গায় হামলা চালিয়েছে। এ ঘটনার যথাযথ ও কঠিন জবাব দেওয়া হবে।”
তিনি আরও বলেন, পাকিস্তানের নিরাপত্তা রক্ষায় তারা সব ধরনের পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত, এবং এই আগ্রাসনের জবাব “সময় ও স্থানের উপযুক্ততায়” দেওয়া হবে।
দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশের মধ্যে এই উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে গোটা অঞ্চলজুড়ে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এখন এই দুই দেশের প্রতি সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানাচ্ছে, যাতে করে এই উত্তেজনা সর্বাত্মক যুদ্ধে পরিণত না হয়।