
সাভারে এক ব্যক্তিকে হত্যার পর তার ২৩ বছর বয়সী মেয়ে জাতীয় জরুরি সেবা-৯৯৯ নম্বরে ফোন করে আত্মসমর্পণের কথা জানিয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এই চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি গতকাল বৃহস্পতিবার ভোরে সাভার পৌর এলাকার মজিদপুরের ‘নূর মোহাম্মদ ভিলা’র একটি ফ্ল্যাটে ঘটে।
নিহত আব্দুর সাত্তার (৫৫) নাটোর জেলার সিংড়া থানার বাসিন্দা এবং তার মেয়ে জান্নাত জাহান শিফার সাথে ওই ফ্ল্যাটে থাকতেন। পুলিশ সাত্তারের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে এবং অভিযুক্ত মেয়ে জান্নাতকে গ্রেপ্তার করেছে।
সাভার মডেল থানার এসআই আব্দুর রশিদ জানান, “ভোররাত ৪টার দিকে এক নারী ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে জানায় যে সে তার বাবাকে হত্যা করেছে এবং পুলিশকে তাকে ধরে নিয়ে যেতে বলে। এরপর পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে আব্দুর সাত্তারের লাশ উদ্ধার করে এবং জান্নাতকে গ্রেপ্তার করে।”
‘নূর মোহাম্মদ ভিলা’র কেয়ারটেকার রহিজ উদ্দিন জানান, বাবা ও মেয়ে পাঁচ মাস আগে তাদের ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে বসবাস শুরু করেন, তবে তাদের ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে তিনি কিছুই জানেন না।
সাভার মডেল থানার এসআই ইমরান হোসেন জানান, নিহত আব্দুর সাত্তারের বিরুদ্ধে ২০২২ সালে তার মেয়ে জান্নাত নাটোরের সিংড়া থানায় একটি ধর্ষণের মামলা দায়ের করেছিলেন এবং সেই মামলায় সাত্তার দীর্ঘদিন কারাভোগের পর জামিনে মুক্তি পেয়ে আবার মেয়ের সঙ্গেই থাকতে শুরু করেন। তবে, ওই মামলার জের ধরে বাবা-মেয়ের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটে এবং সাত্তার মেয়েকে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছিলেন।
এসআই ইমরানের ভাষ্য অনুযায়ী, “এর জেরে বুধবার রাতে জান্নাত তার বাবার রাতের খাবারের সাথে ২০টি ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দেয়। বাবা ঘুমিয়ে পড়লে, ভোরের দিকে ধারালো ছুরি দিয়ে তাকে কুপিয়ে হত্যা করে এবং পরবর্তীতে জরুরি সেবা নম্বরে ফোন করে হত্যার বিষয়টি জানায়।”
তিনি আরও জানান, ফ্ল্যাটে বাবা ও মেয়ে একাই থাকতেন এবং জান্নাতের মায়ের সাথে তার বাবার কোনো সম্পর্ক ছিল না। গ্রেপ্তারের সময় জান্নাতের কাছ থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত রক্তমাখা ছুরি জব্দ করা হয়েছে। ঘটনার পরবর্তী সময়ে ৪ মিনিটের একটি ভিডিও পাওয়া গেছে, যেখানে মেয়েকে ক্ষোভের সাথে তার বাবাকে ছুরি দিয়ে আঘাত করতে দেখা যায় এবং ফ্ল্যাটের চারপাশ রক্তে ভেসে যায়।
এই ঘটনায় সাভার মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।