
সুপারস্টার আমির খান আবারও চমকে দিলেন সিনেমা বাণিজ্যের নতুন এক কৌশল দিয়ে। তাঁর প্রযোজিত ও অভিনীত আসন্ন সিনেমা ‘সিতারে জমিন পার’ ওটিটি প্ল্যাটফর্মে সরাসরি মুক্তি পাচ্ছে না, বরং ‘পে-পার-ভিউ’ মডেলে ইউটিউবে মুক্তি পাবে বলে খবর প্রকাশ করেছে হলিউড রিপোর্টার ইন্ডিয়া। সিনেমাটি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাবে আগামী ২০ জুন, এর আট সপ্তাহ পর এই পদ্ধতিতে মুক্তি পাবে ইউটিউবে। এই সিদ্ধান্ত শুধু প্রচলিত মুক্তি পদ্ধতির বাইরে যাওয়াই নয়, বরং এটি ভারতীয় সিনেমা বাণিজ্যে এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে যাচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ওটিটি প্ল্যাটফর্ম এখন ঘরে ঘরে পৌঁছে গেছে। করোনাকালে যেখানে সিনেমা হল বন্ধ, সেখান থেকে মুক্তির প্রধান মাধ্যম হয়ে উঠে ডিজিটাল স্ট্রিমিং। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ওটিটি প্ল্যাটফর্মের সংখ্যা বাড়তে থাকায় সাবস্ক্রিপশন নিয়ে দর্শকদের অনেকেই ক্লান্ত—এই ‘সাবস্ক্রিপশন ক্লান্তি’ থেকেই নতুন এই মডেলের জন্ম। তাই ‘পে-পার-ভিউ’ মডেল এমন দর্শকদের জন্য, যাঁরা নির্দিষ্ট একটি ছবি দেখতে চান, কিন্তু মাসিক সাবস্ক্রিপশনের ধাক্কা নিতে চান না। এই মডেলে দর্শক শুধু একটি নির্দিষ্ট ছবির জন্য টাকা দিয়ে সেটা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে একবার বা কয়েকবার দেখতে পারবেন। ভারতীয় চলচ্চিত্র বাণিজ্য বিশেষজ্ঞদের মত, ভারতীয় বাজারে এখনো এই মডেলের বিস্তার কম। কিন্তু যদি আমিরের ছবি সফল হয়, তবে এটি হতে পারে ভবিষ্যতের রূপরেখা।
তবে ভারতের বাণিজ্য বিশেষজ্ঞদের অনেকেই আবার মনে করছেন, ভারতে এই পদ্ধতি প্রয়োগে বেশ কিছু সমস্যা রয়েছে। পাইরেসি, নির্ভরযোগ্য পেমেন্ট সিস্টেমের ঘাটতি এবং দর্শকের মানসিক প্রস্তুতির অভাব। এসব মোকাবিলা করে এই মডেল সফলতা নিয়ে কিছুটা শঙ্কা রয়েছে।
২০০৭ সালের ‘তারে জমিন পার’ আমির খানের প্রথম পরিচালনা, যা ভারতীয় সিনেমায় একটি মাইলফলক। শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্য, সৃজনশীলতা ও শিক্ষাব্যবস্থার জটিলতা নিয়ে আবেগঘন গল্প বলেছিল সেই ছবি। শিরোনামে মিল থাকলেও ‘সিতারে জমিন পার’ আদতে ভিন্ন ঘরানার ছবি। তবে এটিকে স্পিরিচুয়াল সিকুয়েল বলা যায়। এটি একটি স্পোর্টস, কমেডি, ড্রামা, যেখানে মূল চরিত্রে থাকবে একঝাঁক বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু, যাঁরা জীবনের প্রতিকূলতা অতিক্রম করে একটি দলের হয়ে খেলার চেষ্টা করে। আর আমির খান থাকবেন একজন অনুপ্রেরণাদায়ী কোচের ভূমিকায়। তাঁর ভাষায়, ‘এটি এমন এক গল্প, যা হাসাবে, কাঁদাবে, ভাবাবে এবং বড়দেরও শিশুদের চোখ দিয়ে জীবন দেখতে শেখাবে।’ এ ছবিটি পরিচালনা করছেন আর এস প্রসন্ন।
আমির খানের শেষ ছবি ‘লাল সিং চাড্ডা’ বক্স অফিসে খুব একটা ভালো করতে পারেনি। পরে ছবিটি ওটিটিতেও মুক্তি পেলেও দর্শকের আগ্রহ ছিল কম। এমন সময় তিনি নতুন ছবি ‘সিতারে জমিন পার’ নিয়ে আসছেন ভিন্ন ধরনের পরিকল্পনা নিয়ে। অনেকেই বলছেন, এটা আমির খানের জন্য এক ধরনের বড় চ্যালেঞ্জ। সফল হলে এটি শুধু তাঁর নিজের ক্যারিয়ারেরই পুনরুজ্জীবন নয়, বরং বলিউডের অন্যান্য নির্মাতাদের জন্যও অনুপ্রেরণা হবে।