জেমস ওয়েব টেলিস্কোপে বৃহস্পতিতে রহস্যময় আলোর ঝলকানি

নিজেস্ব প্রতিবেদক

বিস্মিত জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা!

নাসার জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ বৃহস্পতি গ্রহের মেরু অঞ্চলে এক অভূতপূর্ব এবং রহস্যময় আলোর ঝলকানি (অরোরা) ধারণ করেছে, যা জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের হতবাক করে দিয়েছে। পূর্বে এমন দ্রুত পরিবর্তনশীল এবং তীব্র অরোরার কার্যকলাপ কখনো দেখা যায়নি, যা বিজ্ঞানীরা বৃহস্পতির চৌম্বক ক্ষেত্র এবং বায়ুমণ্ডলীয় মিথস্ক্রিয়া সম্পর্কে যা জানতেন, তা নতুন করে ভাবতে বাধ্য করছে।

 

এল আডেলাটাডো ডি সেগোভিয়া (El Adelantado de Segovia) এর প্রতিবেদন এবং অন্যান্য সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, জেমস ওয়েব টেলিস্কোপের নিয়ার-ইনফ্রারেড ক্যামেরা (NIRCam) ব্যবহার করে ২০২৩ সালের ২৫শে ডিসেম্বর এই পর্যবেক্ষণগুলো করা হয়। বিজ্ঞানীরা প্রত্যাশা করেছিলেন যে, বৃহস্পতির অরোরাগুলো ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হবে, হয়তো ১৫ মিনিট বা তারও বেশি সময় ধরে। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র। অরোরা অঞ্চলটি কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই ঝলসে উঠছে এবং নিভে যাচ্ছে, যা “ফিজলিং অ্যান্ড পপিং” (fizzing and popping) নামে অভিহিত করা হয়েছে। এই দ্রুত পরিবর্তনশীলতা বিজ্ঞানীদের বিস্মিত করেছে।

 

ইউনিভার্সিটি অফ লেইসেস্টারের জোনাথন নিকোলসের নেতৃত্বে পরিচালিত এই গবেষণায় দেখা গেছে, ট্রাইহাইড্রোজেন কেশন (H3+) নামক একটি অণুর নির্গমন, যা সাধারণত অরোরার সময় তৈরি হয়, তা পূর্বের ধারণার চেয়ে অনেক বেশি পরিবর্তনশীল। এই H3+ নির্গমন ইনফ্রারেড আলোতে উজ্জ্বলভাবে জ্বলতে থাকে, যা ওয়েবের যন্ত্রপাতির জন্য এটি পর্যবেক্ষণের জন্য উপযুক্ত।

 

পৃথিবীর অরোরা, যা নর্দার্ন লাইটস বা সাউদার্ন লাইটস নামে পরিচিত, সূর্য থেকে আসা চার্জিত কণা পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রে প্রবেশ করে বায়ুমণ্ডলের গ্যাসীয় অণুগুলির সাথে সংঘর্ষের ফলে তৈরি হয়। বৃহস্পতির অরোরাগুলো পৃথিবীর অরোরার চেয়ে শত শত গুণ বেশি উজ্জ্বল এবং আকারে অনেক বড়। এর একটি কারণ হলো বৃহস্পতির শক্তিশালী চৌম্বক ক্ষেত্র এবং এর আগ্নেয়গিরি সমৃদ্ধ চাঁদ আইও (Io) থেকে নির্গত কণাগুলিও অরোরার সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখে।

 

সবচেয়ে রহস্যজনক দিক হলো, ওয়েব টেলিস্কোপ দ্বারা দেখা সবচেয়ে উজ্জ্বল আলোটির সাথে হাবল টেলিস্কোপের ছবিতে কোনো মিল খুঁজে পাওয়া যায়নি। জোনাথন নিকোলস বলেছেন, “এটি আমাদের মাথা চুলকাতে বাধ্য করেছে। ওয়েব এবং হাবল উভয় দ্বারা দেখা উজ্জ্বলতার সংমিশ্রণ ঘটাতে হলে, বায়ুমণ্ডলে অত্যন্ত কম-শক্তির কণার প্রচুর পরিমাণে আঘাতের একটি আপাতদৃষ্টিতে অসম্ভব সংমিশ্রণ প্রয়োজন—যেন বৃষ্টির ঝড়ের মতো! আমরা এখনও বুঝতে পারছি না এটি কীভাবে ঘটে।”

 

এই নতুন পর্যবেক্ষণগুলো বৃহস্পতির উচ্চ বায়ুমণ্ডল কীভাবে তাপ লাভ করে এবং হারায়, সেই সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের বোঝাপড়াকে নতুন করে সংজ্ঞায়িত করবে। এই আবিষ্কারগুলো বৃহস্পতির চৌম্বক পরিবেশ এবং এর সাথে কণার মিথস্ক্রিয়া সম্পর্কে আমাদের জ্ঞানকে আরও গভীর করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

সম্পর্কিত খবর

এই পাতার আরও খবর

সর্বশেষ