নতুন গবেষণায় মহাজাগতিক উৎপত্তিস্থল নিয়ে চাঞ্চল্য!
মহাবিশ্ব কীভাবে শুরু হয়েছিল? এই মৌলিক প্রশ্নটি নিয়ে বিজ্ঞানীরা শত শত বছর ধরে গবেষণা করে আসছেন। প্রচলিত বিগ ব্যাং তত্ত্ব অনুযায়ী, প্রায় ১৩.৮ বিলিয়ন বছর আগে এক বিশাল বিস্ফোরণের মাধ্যমে সবকিছু শুরু হয়েছিল। কিন্তু সম্প্রতি প্রকাশিত এক নতুন গবেষণা সেই চিরায়ত ধারণাকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে। বিজ্ঞানীরা প্রস্তাব করছেন যে, মহাবিশ্বের এক বিশাল অংশ জুড়ে থাকা রহস্যময় ‘ডার্ক ম্যাটার’ (Dark Matter) হয়তো সময়ের জন্মেরও আগে থেকেই বিদ্যমান ছিল! বিজনেস টুডে-র এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে।
বিগ ব্যাং: কেবল কি একটি মধ্যবর্তী অধ্যায়?
আমাদের জানা মহাবিশ্বের প্রায় ৮০ শতাংশেরও বেশি ‘ডার্ক ম্যাটার’ দিয়ে গঠিত, যা অদৃশ্য। এটি আলো নির্গত বা শোষণ করে না, ফলে সাধারণ টেলিস্কোপ বা যন্ত্রপাতির সাহায্যে একে দেখা যায় না। এর অস্তিত্ব কেবল এর মহাকর্ষীয় প্রভাবের মাধ্যমে অনুমান করা হয়। এতকাল ধরে বিজ্ঞানীরা ডার্ক ম্যাটারের উৎপত্তিকে বিগ ব্যাংয়ের পরবর্তী ঘটনা বলেই ধরে নিয়েছিলেন। কিন্তু নতুন গবেষণা সেই ধারণায় একটি বড়সড় প্রশ্ন চিহ্ন এঁকে দিয়েছে।
এই গবেষণাটি ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, বিগ ব্যাং হয়তো মহাবিশ্বের চূড়ান্ত শুরু নয়, বরং এটি মহাজাগতিক বিবর্তনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মধ্যবর্তী পর্যায়। তত্ত্ব অনুযায়ী, মহাবিশ্বের আদিম ‘স্ফীতি’ (inflationary era) ছিল এমন চরম পরিবেশে, যা কেবল বিগ ব্যাংয়ের পরবর্তী গঠনগুলোকেই প্রভাবিত করেনি, বরং সেই সময়ের আগে থেকেই মৌলিক কণাগুলোকে তৈরি করতে সক্ষম ছিল। এর মানে হলো, ডার্ক ম্যাটার মহাবিশ্বের জন্ম প্রক্রিয়ার একটি উপজাত ছিল না, বরং তা তার আগে থেকেই অস্তিত্বশীল ছিল!
‘WIFI’ মডেল: এক নতুন দিগন্ত
পূর্ববর্তী মডেলগুলো সাধারণত এই ধারণা পোষণ করত যে, মহাজাগতিক স্ফীতির চরম বিশৃঙ্খল শক্তি যেকোনো প্রাথমিক কাঠামোকে নিশ্চিহ্ন করে দিত। কিন্তু এই নতুন মডেল, যার নাম ‘WIFI’ (Weakly Interacting Fermionic Inflation), দাবি করছে যে, ডার্ক ম্যাটার শুধু টিকে ছিল না, বরং সেই আদিম পরিস্থিতিতে তা আরও বৃদ্ধি পেয়েছিল।
যদি এই তত্ত্ব সত্য হয়, তবে এটি মহাবিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন মুহূর্তগুলো বোঝার জন্য এক নতুন পথ খুলে দেবে, যা আমাদের বর্তমান সময়ের ধারণারও অনেক আগের। এর প্রভাব সুদূরপ্রসারী; যদি বিগ ব্যাংয়ের আগেও ডার্ক ম্যাটার গঠিত হয়ে থাকে, তবে আমাদের পরিচিত মহাবিশ্বের বাইরে আরও কী কী রহস্যময় সত্তা বা ঘটনা বিদ্যমান থাকতে পারে, তা নিয়ে নতুন করে ভাবার সুযোগ তৈরি হবে।
কীভাবে পরীক্ষা করা যাবে এই তত্ত্ব?
গবেষকরা এই সাহসী তত্ত্বের প্রমাণ খুঁজতে মহাজাগতিক মাইক্রোওয়েভ ব্যাকগ্রাউন্ড (cosmic microwave background – CMB) – অর্থাৎ বিগ ব্যাংয়ের অবশিষ্ট ক্ষীণ বিকিরণের দিকে নজর রাখছেন।
এই বিকিরণের ক্ষুদ্রাকৃতির নিদর্শনগুলো যদি ‘WIFI’ মডেলের পূর্বাভাসগুলোর সাথে মিলে যায়, তাহলে এটিই হতে পারে প্রথম পরোক্ষ প্রমাণ যে ডার্ক ম্যাটার সত্যিই সময়ের চেয়েও প্রাচীন। এই গবেষণা মহাবিশ্বের উৎপত্তির রহস্য উন্মোচনে এক নতুন এবং উত্তেজনাপূর্ণ অধ্যায়ের সূচনা করতে চলেছে।
