পদত্যাগের ইঙ্গিত দিলেন প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস

নিজেস্ব প্রতিবেদক

রাজনৈতিক অসহযোগিতায় ক্ষোভ, নির্বাচন নিয়ে দায় নিতে অনীহা

 

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ইউনূসের পদত্যাগের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে। আজ বৃহস্পতিবার (২৩ মে) বেলা ১১টায় তেজগাঁওয়ের প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত নির্ধারিত বৈঠকে এই প্রসঙ্গ উঠে আসে। উপদেষ্টা পরিষদের তিনজন সদস্য, প্রধান উপদেষ্টার দুই কর্মকর্তা এবং ছাত্রনেতারা এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, প্রথমে এক ঘণ্টা নিয়মিত সভা হয়। এরপর সচিবরা বেরিয়ে যান এবং উপদেষ্টাদের নিয়ে প্রায় চার ঘণ্টা অনির্ধারিত বৈঠক করেন ড. ইউনূস। দুজন উপদেষ্টা জানান, প্রধান উপদেষ্টা শুরুতে বলেন, রাজনৈতিক দলসহ কেউই সরকারকে প্রতিশ্রুত সহযোগিতা করছে না, এবং এভাবে দায়িত্ব পালন সম্ভব হচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, নির্বাচন নিয়ে চাপ তৈরি করা হয়েছে এবং বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সুষ্ঠু নির্বাচনের সম্ভাবনাও ক্ষীণ, যা একটি নিয়ন্ত্রিত নির্বাচন হবে বলে তার আশঙ্কা। এর দায় নিতে তিনি রাজি নন বলে জানান।

 

বিকেল থেকে এই আলোচনা ‘প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগের গুঞ্জন’ হিসেবে রাজনৈতিক অঙ্গনে ছড়িয়ে পড়ে। বিকেল ৪টায় বিএনপি সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচনের পথনকশার দাবি জানায়, অন্যথায় সরকারকে সহযোগিতা করা কঠিন হবে বলে মত দেয়। বিকেল ৫টার দিকে জামায়াতে ইসলামী দলের নির্বাহী কমিটির সভা করে এবং সর্বদলীয় সভা ডাকার জন্য প্রধান উপদেষ্টার প্রতি আহ্বান জানায়। সন্ধ্যায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতারা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করেন এবং গণমাধ্যমকে জানান যে, তারা প্রধান উপদেষ্টাকে পদত্যাগ না করার জন্য অনুরোধ করেছেন।

 

এদিকে, আদালতের রায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র পদ পাওয়া বিএনপির ইশরাক হোসেনের পক্ষে যাওয়ায় তার সমর্থকরা সপ্তাহখানেক ধরে মেয়র হিসেবে শপথ পড়ানোর দাবিতে রাজপথ অবরোধ করে আন্দোলন করেছেন। গত মঙ্গলবার থেকে তারা প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনার সামনে রাতদিন অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন।
বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে খবর আসতে থাকে যে, প্রধান উপদেষ্টা পদত্যাগ করতে পারেন। বিকেল সোয়া ৪টার দিকে ইশরাক হোসেন ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়ে আন্দোলনের ইতি টানেন। এর কিছু পর শাহবাগ মোড় অবরোধের কর্মসূচি শেষ করে ছাত্রদল।
সরকারপ্রধানের পদত্যাগের ভাবনার কথা রাজনৈতিক অঙ্গনে ছড়ালে সন্ধ্যায় যমুনায় যান জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম এবং মুখ্য সমন্বয়কারী নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। এক ঘণ্টা পর বেরিয়ে আসেন তারা। উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াও প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করেছেন বলে জানা গেছে, যদিও তারা ছাত্রনেতাদের সঙ্গে একই সময়ে গিয়েছেন নাকি আলাদাভাবে, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

 

উপদেষ্টাদের বৈঠকে ড. ইউনূস রাজনৈতিক দলগুলো সরকারকে অবিশ্বাস করায় হতাশা প্রকাশ করেন বলে জানা গেছে। তিনি বলেন যে, নির্বাচনের সঙ্গে সম্পর্কিত নয় এমন বিষয়কেও নির্বাচনী ইস্যু করে তোলা হচ্ছে। তিনি বারবার বলছেন যে, ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে এবং জুনের পর তিনি এক দিনও থাকবেন না, কিন্তু কোথাও যেন অবিশ্বাস রয়ে গেছে।

 

বৈঠকে বলা হয়, নির্বাচন বিতর্কিত হলে নোবেলজয়ী হিসেবে ড. ইউনূসের সারাজীবনের অর্জিত ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে। ড. ইউনূস স্পষ্ট করে বলেন, এই দায় তিনি নিতে চান না। প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, গণঅভ্যুত্থানের পর শিক্ষার্থী ও রাজনৈতিক দলের অনুরোধে তিনি দায়িত্ব নিয়েছিলেন। দলগুলো সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল এবং কথা দিয়েছিল – আগে সংস্কার, পরে নির্বাচন। কিন্তু এখন অস্থিরতা তৈরি করেছে, মানুষের আশা পূরণ করতে দিচ্ছে না, জনদুর্ভোগ তৈরি করছে এবং যেকোনো ইস্যুতেই রাস্তা অবরোধ করছে।

সম্পর্কিত খবর

এই পাতার আরও খবর

সর্বশেষ