শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন কুষ্টিয়ায় আটক: সেনাবাহিনীর অভিযানে সহযোগীসহ গ্রেপ্তার

নিজেস্ব প্রতিবেদক

ছবি : সংগ্রহীত

কুষ্টিয়া শহরের কালীশংকরপুর এলাকার একটি বাসা থেকে শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইনকে তার সহযোগীসহ আটক করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে তিন ঘণ্টাব্যাপী এক শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানের পর সোনার বাংলা মসজিদ-সংলগ্ন ওই বাসা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

আইএসপিআর-এর নিশ্চিতকরণ ও পুলিশের বক্তব্য
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এই আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে এবং জানিয়েছে, বিকেল ৫টায় এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হবে।

এদিকে, মঙ্গলবার দুপুর ২টার দিকে কুষ্টিয়া জেলা পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) ফয়সাল মাহমুদ এবং কুষ্টিয়া মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোশাররফ হোসেনসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিটের কর্মকর্তা ও সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এ সময় তারা ওই ভবনের ভাড়াটিয়া ও আশপাশের স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলেন।

পুলিশের কর্মকর্তারা এ বিষয়ে বলেন, আজ তাদের কোনো অভিযান ছিল না এবং সুব্রত বাইনসহ দুজনকে আটকের বিষয়টি তারা বিভিন্ন জায়গা থেকে শুনেছেন। তবে কে বা কারা, কাকে আটক করেছে, সে বিষয়ে এখনো নিশ্চিত হতে পারেননি। খবর শুনে তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন এবং এখনই নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারছেন না।

কালীশংকরপুর এলাকার ওই বাসার ভাড়াটিয়া সানজিদুর ও ইভান জানান, তিনতলা বিশিষ্ট এই ভবনের নিচতলা প্রায় দেড় মাস আগে পেছনের বাসার মালিকের ছেলে ভাড়া নিয়েছিলেন এবং আটককৃতদের সেখানে উঠিয়েছিলেন। আটককৃত দুজন খুব বেশি চলাফেরা করতেন না এবং তাদের সঙ্গে স্থানীয়দের মেলামেশা বা পরিচয় ছিল না। পাশের ভবনের মালিক তাদের আত্মীয় পরিচয় দিয়েছিলেন এবং বলেছিলেন, তারা ব্যবসা করবে ও এখানে থাকবে।

 

ভাড়াটিয়া ও স্থানীয় কয়েকজন জানান, মঙ্গলবার ভোর ৫টা থেকে ৮টা পর্যন্ত সেনাবাহিনীর একটি দল অভিযান চালিয়ে দুজনকে আটক করে নিয়ে যায়। তারা দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করেন এবং পাশের ভবনের মালিকের ছেলের সঙ্গেও কথা বলেন। তারা জানতে পেরেছেন, সুব্রত বাইন নামে একজনকে সহযোগীসহ আটক করা হয়েছে এবং তার চেহারার সঙ্গে মিলও খুঁজে পেয়েছেন। অভিযানে অংশ নেওয়া কয়েকজন তাদের সুব্রত বাইনের নাম বলেছিলেন।

 

স্থানীয়রা আরও জানান, এলাকায় অধিকাংশ বাড়িতে মেস ভাড়া দেওয়া হয়। যে বাড়িতে অভিযান চালানো হয়েছে, সেটির সামনে পৌরসভার সাইনবোর্ডে বাড়ির মালিকের নাম মীর মহিউদ্দিন লেখা রয়েছে। তিনতলা বাড়ির দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলার মেসে বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের ১৮ জন ছাত্র থাকেন।

 

মেসের শিক্ষার্থীরা জানান, ভোর ৫টার দিকে বাড়ির সামনে সেনাবাহিনীর ৫ থেকে ৬টি গাড়ি আসে, যার মধ্যে একটি কালো মাইক্রোবাসও ছিল। প্রায় ৫০ জন সেনাসদস্য বাড়ির তালা খুলতে বলেন। তালা খোলার পর তারা দোতলা ও তিনতলায় ওঠেন এবং মেসের সব বাসিন্দাদের একটি কক্ষে রেখে বলেন, “তোমাদের কোনো ভয় বা সমস্যা নাই। তোমরা বসে থাকো। এখানে অভিযান চলছে।” তারা আরও জানান, সেনা কর্মকর্তা খুবই আন্তরিকতার সঙ্গে কথা বলেছিলেন।

 

প্রায় ৩ ঘণ্টা ধরে নিচতলায় তল্লাশি চলে। সকাল ৮টার কিছু সময় পর কালো মাইক্রোবাসটি গেটের সামনে চলে আসে। নিচতলা থেকে দাড়িওয়ালা এক ব্যক্তিকে হাতকড়া পরা ও মাথায় গামছা বাঁধা অবস্থায় গাড়িতে তোলা হয়। আরেক যুবকের কোমরে ও শরীরে দড়ি দিয়ে বাঁধা ছিল।

সুব্রত বাইন বাংলাদেশের একজন কুখ্যাত অপরাধচক্রের নেতা এবং তাকে ‘শীর্ষ সন্ত্রাসী’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। তার বিরুদ্ধে ঢাকায় কমপক্ষে ৩০টি খুনের মামলা রয়েছে। ২০০৩ সাল পর্যন্ত সুব্রত বাইন ঢাকার অপরাধ জগতের প্রভাবশালী চক্র সেভেন স্টার গ্রুপের প্রধান ছিলেন। ১৯৯১ সালে ঢাকার আগারগাঁও এলাকায় জাসদ ছাত্রলীগ নেতা মুরাদকে হত্যার মধ্য দিয়ে তার সন্ত্রাসী হিসেবে অভিষেক হয়। তিনি যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি।

 

২০০১ সালে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যে ২৩ জন শীর্ষ সন্ত্রাসীকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য পুরস্কার ঘোষণা করেছিল, সুব্রত বাইন তাদের অন্যতম ছিলেন। পুলিশের হাতে আটক হওয়া এড়াতে তিনি ২০০৩ সালে বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান এবং সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাস ও ব্যবসা শুরু করেন, এমনকি জমি কিনে বাড়িও বানান।

সম্পর্কিত খবর

এই পাতার আরও খবর

সর্বশেষ