নীরবতা ভাঙার লড়াই’ প্রতিটি হাসপাতালেই ছড়িয়ে দিতে চান স্পিচ থেরাপিস্টরা: সেবার সম্প্রসারণের দাবি

নিজেস্ব প্রতিবেদক

ছবি : সংগ্রহীত

যারা পৃথিবীর শব্দ শুনতে পান, চারপাশের রঙ ও রূপ অনুভব করতে পারেন, কিন্তু শব্দের প্রয়োগ এবং উচ্চারণে নিজের ভাব প্রকাশে অক্ষম—এমন মানুষের ‘নীরবতা ভাঙার লড়াইয়ে’ পাশে দাঁড়িয়েছেন স্পিচ অ্যান্ড ল্যাংগুয়েজ থেরাপিস্টরা। দেশে এই সেবার চাহিদা বাড়লেও তা এখনো সীমিত কিছু শহর ও প্রতিষ্ঠানে সীমাবদ্ধ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যোগাযোগের অধিকার একটি মৌলিক মানবাধিকার হলেও বাংলাদেশে অধিকাংশ হাসপাতালেই স্পিচ থেরাপির সেবা নেই। তাই প্রতিটি হাসপাতালেই এই নীরবতা ভাঙার লড়াই ছড়িয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন স্পিচ থেরাপিস্টরা।

 

সিআরপিতে ৮ম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও সেবার সম্প্রসারণের দাবি
বুধবার (২৮ মে) সাভারের পক্ষাঘাতগ্রস্তদের পুনর্বাসন কেন্দ্রে (সিআরপি) ‘সোসাইটি অব স্পিচ অ্যান্ড ল্যাংগুয়েজ থেরাপিস্টসের (এসএসএলটি)’ ৮ম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এ দাবি ওঠে।

 

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোস্তফা কামাল। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএইচপিআই-এর উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক ওবায়দুল কাদের এবং সিআরপি’র নির্বাহী পরিচালক ও উপাধ্যক্ষ ড. মো. সোহরাব হোসেন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন স্পিচ অ্যান্ড ল্যাংগুয়েজ থেরাপিস্ট তাহমিনা সুলতানা। সভাপতিত্ব করেন এসএসএলটির সভাপতি সহকারী অধ্যাপক ফিদা আল-শামস। অনুষ্ঠানে ১০ জন শিক্ষার্থীকে

 

এসএসএলটি লিডারশিপ স্কলারশিপ প্রদান করা হয়।
ড. সোহরাব হোসেন বলেন, “রিহ্যাবিলিটেশন কাউন্সিল আইনের মাধ্যমে স্পিচ থেরাপিস্টদের ভূমিকা এখন আরও জোরালো হয়েছে। শুধু প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি নয়, প্রতিটি হাসপাতালে এই সেবা চালু করাও এখন সময়ের দাবি।” তিনি উল্লেখ করেন, সিআরপি দীর্ঘদিন ধরে এ পেশার প্রশিক্ষণ ও বাস্তব প্রয়োগে কাজ করছে।

 

প্রধান অতিথি মোস্তফা কামাল বলেন, “প্রতিবন্ধিতা নিয়ে যারা জীবনযাপন করছেন, তাদের সামাজিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে এবং পূর্ণ সক্ষমতা বিকাশে স্পিচ থেরাপিস্টদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় এই খাতকে নীতিগত ও আর্থিক সহযোগিতার মাধ্যমে এগিয়ে নিতে আগ্রহী।”

 

স্পিচ থেরাপির প্রয়োজনীয়তা ও বর্তমান চিত্র
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কথা বলার সক্ষমতা কেবল ভাষাগত যোগাযোগ নয়, এটি আত্মবিশ্বাস, মানসিক স্বাস্থ্য এবং সামাজিক সক্ষমতার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এটিকে আর বিলাসী বা শুধুমাত্র নির্দিষ্ট প্রতিবন্ধীদের জন্য নির্ধারিত সেবা হিসেবে দেখলে চলবে না। স্পিচ থেরাপি দরকার স্কুলে, হাসপাতালে, কর্মস্থলে— যেখানে মানুষ নিজেকে প্রকাশ করতে চায়।

 

অনুষ্ঠানে বক্তারা জানান, বর্তমানে দেশে সরকারি উদ্যোগে খুব অল্পসংখ্যক স্থানে স্পিচ থেরাপির শিক্ষা ও সেবা রয়েছে। ঢাকার বাইরে এই সেবা প্রায় অনুপস্থিত। অথচ শিক্ষা, চাকরি, এমনকি সাধারণ পারিবারিক জীবনেও এই থেরাপির প্রয়োজনীয়তা দিন দিন বেড়েই চলেছে। বক্তারা আশা প্রকাশ করেন, সরকার অচিরেই প্রতিটি জেলায় এবং বিশেষ করে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্পিচ থেরাপি ইউনিট চালু করবে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং ইউএনইএসসিও’র বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বাংলাদেশে ৫ বছরের কম বয়সী প্রতি এক হাজার শিশুর মধ্যে অন্তত ৮-১০ জন কোনো না কোনো ধরনের স্পিচ বা ভাষাগত বিকাশগত সমস্যায় ভোগে। এই হার শহরের তুলনায় গ্রামীণ ও প্রান্তিক এলাকায় আরও বেশি। ২০১৯ সালে জাতীয় শিশু নীতির আওতায় করা এক পর্যালোচনায় দেখা যায়, বাংলাদেশে প্রায় ৬ লাখ শিশু বিভিন্ন ধরনের কথা বলার বা বোঝার সমস্যায় আক্রান্ত। কিন্তু দেশের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে স্পিচ থেরাপিস্টের সংখ্যা ৩০০–৩৫০ জনের মধ্যে সীমাবদ্ধ, যা প্রয়োজনের তুলনায় অতি নগণ্য।

সম্পর্কিত খবর

এই পাতার আরও খবর

সর্বশেষ