
ছবি : সংগ্রহীত
লন্ডনে পৌঁছেই প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনুস ব্যস্ত সময় পার করছেন। স্থানীয় সময় সকাল ৭টায় এমিরাটস এয়ারলাইন্সের একটি উড়োজাহাজে হিথ্রো বিমানবন্দরে পৌছান প্রধান উপদেষ্টা ও তাঁর সফরসঙ্গীরা। এ সময় বিমানবন্দরে তাদের স্বাগত জানান রাজ পরিবারের প্রতিনিধি ও লন্ডনে নিযুক্ত বাংলাদেশ হাইকমিশনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। বিমানবন্দর থেকে সেন্ট্রাল লন্ডনের হোটেল ডচেস্টারে পৌছান বেলা ১০টায়। কিছুক্ষণ বিশ্রামের পরই শুরু হয় পূর্ব নির্ধারিত ধারাবাহিক মিটিং। সবগুলো মিটিংই অনুষ্ঠিত হয় তাঁর হোটেলের লবিতে। বেলা ১২টায় প্রধান উপদেষ্টার সাথে বৈঠক করেন এয়ারবাসের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এয়ারবাসের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট ওটার ভেইন ওয়ারস তখন প্রধান উপদেষ্টার সাথে বৈঠক করেন। তারপরপরই বেলা সাড়ে ১২টায় বৈঠক করেন ম্যানজিস এভিয়েশনের উর্ধ্বতন কর্তা ব্যক্তিরা। বেলা ২টায় বৃটিশ পার্লামেন্টের অলপার্টি পার্লামেন্টারি গ্রুপের সদস্যরা আসেন প্রধান উপদেষ্টার হোটেলে। এতে নেতৃত্ব দেন অলপার্টি পার্লামেন্টারি গ্রুপের চেয়ারম্যান লেবার পার্টির এমপি আফসানা বেগম। বিকাল সাড়ে ৫টায় প্রধান উপদেষ্টার হোটেলে আসেন কমনওয়েলথ সেক্রেটারি জেনারেল। দীর্ঘ ১৩ ঘন্টার বিমান জার্নির পর লন্ডনে পৌছে এভাবেই ব্যস্ত সময় কাটান বয়োবৃদ্ধ ড. মুহাম্মদ ইউনুস।
এদিকে প্রধান উপদেষ্টার হোটেলের সামনে তাকে বিক্ষোভ ও কালো পতাকা প্রদর্শন করে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগের যুক্তরাজ্য শাখার নেতাকর্মীরা। যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন শহর থেকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সকালেই হোটেলের সামনে এসে অবস্থান নেন। যদিও পুলিশের অনুমতি নিয়ে গত সন্ধ্যা পর্যন্ত টানা পোড়েন ছিল।
অপরদিকে প্রধান উপদেষ্টাকে স্বাগত জানিয়ে একই রাস্তার অপর পাশে অবস্থান নেন যুক্তরাজ্যে বসবাসরত বাংলাদেশীদের বিভিন্ন সংগঠন। উভয় গ্রুপই নিজ নিজ অবস্থান থেকে বিভিন্ন শ্লোগান দেন তখন। দুই পক্ষের এই অবস্থানে সেন্ট্রাল লন্ডনের ব্যস্ততম এই এলাকায় যাতায়াতকারীদের বিরক্ত প্রকাশ করতে দেখা যায়। সকালে এমনিতেই এই রাস্তা বেশ ব্যস্ত থাকে। তার উপর দুই পক্ষের অবস্থানের ফলে বেশ যানজট তৈরি হয়। যদিও পুলিশ ব্যারিকেট দিয়ে দুই পক্ষকে ফুটপাতে আটকে দেওয়ার চেষ্টা করতে দেখা গেছে।গতকাল সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে প্রধান উপদেষ্টা ও তার সফরসঙ্গীদের বহনকারী এমিরাটস এয়ারলাইনসের ফ্লাইটটি লন্ডনের বাংলাদেশ হাইকমিশনে পৌঁছায়। হাইকমিশন সূত্র জানায়, প্রধান উপদেষ্টাকে রাজা তৃতীয় চার্লসের সঙ্গে সাক্ষাতের কথা রয়েছে। এছাড়া ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি, অন্যান্য সিনিয়র মন্ত্রী, রাজনৈতিক নেতা এবং ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বরা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। এতেই স্পষ্ট আগামী দুই দিনও প্রধান উপদেষ্টা ব্যস্ততম সময় কাটাবেন লন্ডনে।
বিশ্বব্যাপী গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ অধ্যাপক ইউনূসকে রাজা তৃতীয় চার্লস ‘কিং চার্লস তৃতীয় হারমনি অ্যাওয়ার্ড ২০২৫’-এর জন্য মনোনীত করেছেন। জনগণ এবং পরিবেশের মধ্যে শান্তি, স্থায়িত্ব এবং সম্প্রীতি প্রচারে তার আজীবন কাজের সম্মানার্থে এ পুরস্কারে ভূষিত করা হবে। ১২ জুন লন্ডনের সেন্ট জেমস প্যালেসে এক অনুষ্ঠানে এ পুরস্কার প্রদান করা হবে। চার দিনের সফরের শেষ দিনে শুক্রবার সকালে বাংলাদেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্রধান উপদেষ্টার সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে হোটেলে আসার কথা রয়েছে। সব ঠিক থাকলে শুক্রবার সকালে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনসহ বিভিন্ন বিষয়ে বিএনপির সাথে সরকারের টানাপোড়েনের মধ্যে এই বৈঠক নিয়ে সর্বমহলে আগ্রহ তৈরি হয়েছে।