জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বছরপূর্তি: আন্দোলনের নতুন পর্যায়ের সূচনা

নিজেস্ব প্রতিবেদক

ছবি : সংগৃহীত

গত বছরের ১ জুলাই শুরু হওয়া কোটা সংস্কার আন্দোলনের বছরপূর্তি উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন নানা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। ২০২৪ সালের এই দিনে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন রূপ নেয় গণঅভ্যুত্থানে, যা পরবর্তীতে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের সূচনা করে।

২০২৪ সালের ৫ জুন হাইকোর্ট প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটাসহ কোটা পদ্ধতি পুনর্বহাল করলে, শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নামে। ১ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ শুরু করে। এবং পরবর্তীতে প্রাইভেট ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সহ সর্বস্তরের শিক্ষার্থী রা রাস্তায় নামে।তাদের মূল দাবি ছিল—কোটা পদ্ধতি সম্পূর্ণ বাতিল করা।

এ দিন শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে কলাভবন, মল চত্বর, ভিসি চত্বর ও টিএসসি হয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে সমাবেশে মিলিত হয়। এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘সংবিধানের/মুক্তিযুদ্ধের মূলকথা, সুযোগের সমতা’, ‘সারা

বাংলায় খবর দে, কোটা প্রথার কবর দে’, ‘১৮’র হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার’, ‘জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্রসমাজ জেগেছে’, ‘কোটা প্রথা বাতিল চাই বাতিল চাই’, ‘কোটা প্রথার বিরুদ্ধে, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’, ‘মুক্তিযুদ্ধের বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’ ইত্যাদি স্লোগানে রাজপথ মুখরিত করতে থাকেন।

শিক্ষার্থীদের তিন দিনের কর্মসূচির মধ্যে ছিল মহাসড়কে মিছিল, সমাবেশ ও শ্রেণিবর্জন। অত:পর আন্দোলন দ্রুত গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেয় এবং ৫ইআগস্ট যা ছিলো শিক্ষার্থীদের ভাষায় ৩৬ শে জুলাই’ সেদিন নাটকীয় ভাবে ১৬ বছরের আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে।

আজ সেই ১লা জুলাই!
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তিতে মাসব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিভিন্ন সংগঠন-

অন্তর্বতী সরকারের ৩৬ দিনব্যাপী কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে শহীদদের স্মরণ, ডকুমেন্টারি প্রদর্শন, স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপন ও আলোচনা অনুষ্ঠান। ৫ আগস্ট বিজয় মিছিলের মাধ্যমে শেষ হবে এ আয়োজন।
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি): আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম জানিয়েছেন, ১ থেকে ৩০ জুলাই দেশের সব জেলায় ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ হবে। ১ জুলাই শহীদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারতের মাধ্যমে এই পদযাত্রা শুরু হবে এবং শহীদ পরিবারদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করা হবে।

অপরদিকে বিএনপির, ৩৬ দিনের কর্মসূচিতে রয়েছে বিজয় মিছিল, আলোচনা সভা, রক্তদান, গ্রাফিতি অঙ্কন ও ফুটবল টুর্নামেন্ট । ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ভার্চুয়ালি অংশ নেবেন।

গণঅধিকার পরিষদ  ‘কোটা সংস্কার থেকে রাষ্ট্র সংস্কার’ শীর্ষক আলোচনা সভার আয়োজন করবে।

ইসলামী ছাত্রশিবির’ শহীদদের কবর জিয়ারত, সেমিনার, গবেষণা সম্মেলন ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দিনটি স্মরণ করবে।
আপ বাংলাদেশ’ জুলাই ঘোষণাপত্র বাস্তবায়ন, গুম-খুনের বিচার ও আহতদের চিকিৎসার দাবিতে গণসংযোগ করবে।

১ জুলাইয়ের আন্দোলন শুধু কোটা সংস্কারের দাবিই ছিল না, এটি হয়ে ওঠে একটি systemic change-এর দাবি। এই আন্দোলনের মাধ্যমেই দেশে নতুন রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিবর্তনের সূচনা হয়, যা আজও বিভিন্ন দাবি-দাওয়ার মাধ্যমে চলমান।

বর্ষপূর্তির এই দিনে শহীদদের স্মরণ ও আন্দোলনের চেতনাকে ধারণ করে আগামীর বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন অংশগ্রহণকারীরা।

সম্পর্কিত খবর

এই পাতার আরও খবর

সর্বশেষ