
ছবি : সংগৃহীত
গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সমাবেশের পর হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনায় তিনজন নিহত হয়েছেন। হাসপাতাল সূত্র ও নিহতদের পরিবারের বরাতে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। নিহতরা হলেন গোপালগঞ্জ শহরের উদয়ন রোডের দীপ্ত সাহা (২৫), কোটালীপাড়ার রমজান কাজী (১৮) এবং টুঙ্গীপাড়ার সোহেল মোল্লা (৪১)।
বুধবার বিকেল সোয়া পাঁচটার দিকে গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক জীবিতেষ বিশ্বাস জানান, গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তিনজনকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছে। নিহতদের মধ্যে দুজনের পরিচয় বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে নিশ্চিত হয়, অন্যজনের মৃত্যুর খবর রাত সাড়ে সাতটায় নিশ্চিত করা হয়। এছাড়া, গুলিবিদ্ধ আরও ৯ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে, যাদের অস্ত্রোপচার চলছে।
নিহত দীপ্ত সাহার চাচা জানান, দীপ্ত দুপুরে খাবার খেয়ে দোকানে যাওয়ার পথে শহরের চৌরঙ্গী এলাকায় গুলিবিদ্ধ হন। রমজান কাজীর বাবা কামরুল কাজী বলেন, “আমার ছেলেকে মেরে ফেলেছে। সে তো কোনো দোষ করেনি। আমি এখন আমার সন্তানকে কোথায় পাব?” অন্যদিকে, সোহেল মোল্লা চৌরঙ্গীর কেরামত আলী প্লাজায় মোবাইল ব্যবসায়ী ছিলেন, তার মৃত্যুর বিষয়টি একই মার্কেটের দোকানদার জনি খান নিশ্চিত করেছেন।
গোপালগঞ্জ পৌর পার্কে এনসিপির সমাবেশ শেষে হামলার ঘটনা ঘটে, যার পরিপ্রেক্ষিতে প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করে। প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনায়, সমাবেশ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আওয়ামী লীগের সমর্থকরা লাঠিসোঁটা নিয়ে এনসিপির নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা চালায়। এ সময় পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা সাউন্ড গ্রেনেড ও ফাঁকা গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন। এনসিপির নেতা-কর্মীরা দ্রুত গাড়ি নিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।
এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী অভিযোগ করেন, “আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা এই হামলা চালিয়েছে। পুলিশ ও সেনাবাহিনী নিষ্ক্রিয় ছিল। আমাদের বলা হয়েছিল সব ঠিক আছে, কিন্তু আমরা এসে দেখলাম পরিস্থিতি সম্পূর্ণ বিপরীত।”
সমাবেশ শুরুর আগেই উত্তেজনা তৈরি হয়। বেলা পৌনে ২টার দিকে ২০০ থেকে ৩০০ লোক লাঠিসোঁটা নিয়ে *‘জয় বাংলা’* শ্লোগান দিয়ে এনসিপির সমাবেশস্থলে ঢুকে পড়েন। এ সময় পুলিশ সদস্যরা দ্রুত আদালত চত্বরে সরে যান, এনসিপির নেতা-কর্মীরাও মঞ্চ থেকে দৌড়ে পালান। হামলাকারীরা মঞ্চের চেয়ার ভাঙচুর করেন এবং ব্যানার ছিঁড়ে ফেলেন। পরে জেলা পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান ঘটনাস্থলে পৌঁছালে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়।
এনসিপির কর্মসূচি ঘিরে গোপালগঞ্জে এর আগেও সহিংসতা দেখা দেয়। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে গোপালগঞ্জ-টেকেরহাট সড়কের কংশুরে পুলিশের গাড়িতে আগুন দেওয়া হয় এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) গাড়িতে হামলা চালানো হয়। ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, গাড়ি পোড়ানোর সময় ছাত্রলীগের গোপালগঞ্জ জেলা সাধারণ সম্পাদক মো. পিয়াল লাঠি হাতে দাঁড়িয়ে আছেন। ভিডিওতে অন্যজনকে বলতে শোনা যায়, “আমরা পিয়াল ভাইয়ের সাথে আছি।”
ঘটনায় পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান এবং জেলা প্রশাসক মুহম্মদ কামরুজ্জামানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তাদের ফোন করা হলে তারা কথা বলতে রাজি হননি।
এ ঘটনায় গোপালগঞ্জে উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, এবং স্থানীয় প্রশাসন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কঠোর অবস্থান নিয়েছে।