১
নরক
স্বার্থের অধিক স্বার্থপর, তোমার বুকত
শুইয়া আদর করনের ভান করতাছে
তুমি তারে ভাবতাছো প্রেমিক,
সৌখিন দুঃখ জিয়াই রাখছে নোখের ডগায়
খামছি দিয়া ভুখা থাকনের দুক্ষ ভুলতে চাইতাছে
তুমি তারে ভাবতাছো শ্রমিক,
দ্যাখা হইলে চোখ মুইদ্যা সেয়ানা হাসি দ্যায়
তোমারে ডুবাইতে--ডিঙি নাও খিচ্চা নাড়াইতাছে
তুমি তারে ভাবতাছো রসিক,
সোহাগের বায়না ধইরা কয় দিমু চুমুক?
সোনার অঙ্গ জ্বালাইয়া দিতে ঠোঁটে নীল বিষের প্রলেপ দিতাছে
তুমি তারে ভাবতাছো আচানক,
অথচ যে,
তোমার মুখ দেহনের লাইগ্যা ছটফট করতাছে
তোমার চোহের চাহনি দেহনের লাইগ্যা
হাঘরে হইছে
তোমার মুহের কতা হুননের লাইগ্যা হাঁসফাঁস করতাছে
তোমারে ভালোবাসি কইতে কইতে বুক পুড়াইয়া ছারখার করতাছে
"তুমি তারে ভাবতাছো নরক!"
২
অরণ্য
বর্ষার নদীতে বুক ডুবিয়ে আছে অরণ্য,
অরণ্য আমার বন্ধু,
যে মুক্তির জন্য নিজের নাম পাহাড় থেকে লোকালয়ে নিয়ে এসেছে মানুষের নামে!
নিঃসঙ্গ পথিক হয়েছে অবলীলায়,
অসহনীয় হিম ঠান্ডায় জমে থাকা দুঃখ সোপর্দ করেছে তেজি সূর্যের দিকে।
অরণ্য আমার বন্ধু,
যে মুক্তি চেয়েছিলো পাহাড় থেকে,
পাথরের গায়ে জমে থাকা শ্যাওলার থেকে স্রোতে—ঢেউয়ে, অথবা নিজের থেকে—!
মুক্তি চাইতে চাইতে অরণ্য আরো বন্দী হয়ে গেলো মানুষের কাছে, মানুষ নামে।
মানুষ - কার কাছে যায়, মানুষ ছাড়া?
নির্জনতায়, কোলাহলে —
গর্ভ থেকে গোরস্থানে মানুষ মানুষের কাছে'ই যায়;
অথচ তার যাওয়ার কথা ছিলো নিজের কাছে!
অরণ্য আমার বন্ধু,
সেকি তবে মানুষ হয়ে যাবে? গ্যাছে?
তাহলে কি আমিও বর্ষার নদীতে পা ডুবিয়ে বসে থাকবো?
যদি স্রোতের তোড়ে ভেসে যাই!
আমি অরণ্যের বন্ধু,
আমার ডানা ভাঙ্গা বুকে সীমাহীন মায়া — অরণ্য'কে হারানোর শোক!
৩
অপ্রাসঙ্গিক
সামান্য একটু জায়গা জুড়ে,
আমি কী থেকে যেতে পারি না?
একদম অতি অল্প জায়গা জুড়ে -
ভাঙাচোরা গলির ধুলাবালি মুছে,
ময়লা অপরিষ্কার দুর্গন্ধে- দুয়েক ফোঁটা সুঘ্রাণ স্প্রে করে
আমাকে কী বলা যায় না- থেকে যাও!
তুমি বললেই তো আমি থেকে যাই,
মিইয়ে যাওয়া শীতের ভোর মৃদুভাবে আঁকড়ে ধরে--
ছুটে চলে আসি ইমিগ্রেশন,ঋণ আর শিকল ভেঙে,
নারকীয় শৈশবের ডানায় পালক গুজে।
আমাকে কী একবার অস্পষ্ট উচ্চারণে বলা যায় না?
এসো
বসো
থেকে যাও...
অথবা রেখে দেওয়া যায় না--
যখন তুমিও তোমার পাশে থাকো না
লুকিয়ে , গুছিয়ে যত্ন করে- যায় তো!
যাবে না কেন?
৪
জীবন যাপন
জীবনকে দেখার ইচ্ছে হয় খুব কাছ থেকে
অথচ জীবন যাপন করতে হয় দূরের নক্ষত্রের মাঝে থেকে।
কেমন একটা অবিশ্বাস্য ব্যাপার জন্ম,
তারপর চিরকাল এই জন্ম কে-ই সত্য বলে বিশ্বাস করতে হয়,
যে নারীর শরীরে সঞ্চারিত হয়ে
প্রবাহিত হচ্ছে জীবন,
তার নিকটে ফিরে যাওয়া যায় না।
কেন যায় না?
জন্মের চেয়ে মৃত্যুই অধিক শক্তিশালী বলে?
মাকে মাটির মতো মনে হয় বলেই পৃথিবীর সমস্ত সন্তান তার কাছে ফিরতে চায়
বাবার কাছে কেউ ফিরতে চায় না।
না ফেরাই ভালো
দিগন্তরেখায় যে চিহ্ন মিশে গেছে...!
জীবনকে দেখার ইচ্ছে হয় খুব কাছ থেকে
অথচ জীবন যাপন করতে হয় সমুদ্রের গভীরতা থেকে
মানুষের কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না
বারবার জিজ্ঞেস করে, বারবার, বারবার
তবু এ জীবনের জিজ্ঞাসা শেষ হয় না
আর কতটা দূরত্ব অকূল সমুদ্র থেকে বাতিঘর?
হাজারে বিজারে কাচের খঞ্জনি বিঁধে যায়
পুকুরের টলটলে জলে চাঁদের প্রতিবিম্ব হয়ে,
রাত ঘনিষ্ঠ হয়ে আসে,
এ জীবনের সরল অংক সমাধানের পথ পেয়ে যায় শূন্যের কোঠায়,
বারান্দায় জমাট বেঁধে থাকে দুঃখের চাষাবাদ
শ্বেত পুস্প সৌরভ বিলীন হয়;
জীবনকে দেখা যায় না জীবনের অতি নিকটে ঘেঁষে।
৫
মোলাকাত
তোমার প্রতিটি মূহুর্তের তুচ্ছতা ,অবহেলা
আমাকে কেটেছে ধারালো ছুরির মতো,
তবু চিৎকার করিনি অভিযোগের সুরে
বুকের ভিতর শূন্যতা নিয়ে বারবার চেয়েছি,
আমাকে বুঝো অল্প একটু!
প্রতিদিন একটু করে ভেঙে নিজেকে -বুঝিয়েছি
একদিন স্থীর হবে খরস্রোতা নদী-
অবশেষে একদিন জানলাম নদী কখনো স্থীর হয়না
চুপচাপ স্থীর হতে হয় মানুষ কে
তারপর সম্পূর্ণ নিশ্চুপ হয়ে গিয়েছি।
তুমি বুঝতেও পারোনি
কখন আমি হৃদয়ের দরজা বন্ধ করে
"সায়েদ ফের ইস জানাম মে
মোলাকাত হো না হো" বলে সরে এসেছি
নিজেকে ভালোবাসে, নিজেকে হারাতে না দিয়ে।
আমি চাই না কখনো তোমাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে থাকুক
এইসব হাহাকার,শূন্যতা তবুও হয়তো --
হয়তো..
হঠাৎ তারা একদিন ফিরবে তোমার কাছে,
ভোরবেলা ঘুম ভাঙার মুহূর্তে, গভীর রাতে,
তুমি বুঝে যাবে যা হারিয়েছো তা ফিরে পাবে না আর কখনো কোন দিন।
মনে করে দেখো গুনগুন করে বলেছিলাম-
"জি ভার কে দেখ লিজিয়ে
হামকো কারিব সে!"