
পাকিস্তান যখন একদিকে ভারতের সঙ্গে সীমান্ত উত্তেজনার উচ্চতর পর্যায়ে রয়েছে, অন্যদিকে আফগানিস্তান সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশের নামে সন্ত্রাসী হামলার হুমকি ভয়ঙ্করভাবে মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। নর্থ ওয়াজিরিস্তানের হাসান খেল সীমান্তে পাকিস্তানি নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে অন্তত ৫৪ জন সন্ত্রাসীর নিহত হওয়া, কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়— এটি বৃহত্তর আঞ্চলিক শক্তির খেলায় পাকিস্তানকে ব্যস্ত রাখার একটি সুপরিকল্পিত প্রয়াস।
পাকিস্তানের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) স্পষ্ট ভাষায় বলেছে, এসব অনুপ্রবেশকারী ‘‘বিদেশী প্রভুদের’’ নির্দেশে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে হামলা চালাতে এসেছিল। প্রশ্ন হলো— এ ‘বিদেশী প্রভু’ কারা? আফগানিস্তানে তালিবানের পুনরুত্থানের পর বিশ্বমঞ্চে যে শূন্যতা তৈরি হয়েছে, সেখানে ভারত, ইরান এবং কিছু পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থা সক্রিয় ভূমিকা রাখছে বলে বিভিন্ন বিশ্লেষকরা ইঙ্গিত করছেন।
আফগানিস্তান এখন একটি অরাজকতার প্ল্যাটফর্মে পরিণত হয়েছে, যেখানে অসংখ্য সন্ত্রাসী গোষ্ঠী একে অপরের ছত্রছায়ায় টিকে আছে। পাকিস্তান, যেটি এতদিন আফগান ইস্যুতে কৌশলগত সুবিধা পাওয়ার আশা করছিল, এখন নিজেই তার নির্মিত ফাঁদে জড়িয়ে পড়ছে। তালিবান প্রশাসনের পক্ষ থেকে সীমান্তে নিয়ন্ত্রণের অভাব এবং টিটিপির মতো গোষ্ঠীগুলোর প্রশ্রয় পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য সরাসরি হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
উল্লেখযোগ্য যে, আফগানিস্তান থেকে আগত সন্ত্রাসীরা শুধু পাকিস্তানের ভেতরে হামলা চালানোর চেষ্টা করছে না, বরং আন্তর্জাতিক শক্তির কাছে পাকিস্তানকে একটি অস্থিতিশীল রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। এই চিত্র পশ্চিমা মিডিয়ার মাধ্যমে বিশ্বমঞ্চে পাকিস্তানের ভাবমূর্তিকে আরও ক্ষতিগ্রস্ত করতে ব্যবহার করা হচ্ছে।
পাকিস্তান যদি এখনই কৌশলগত সিদ্ধান্ত না নেয়, তাহলে আগামী দিনে তাকে একসঙ্গে ভারতের সঙ্গে সরাসরি সীমান্ত সংঘাত এবং আফগানিস্তান থেকে ছড়িয়ে পড়া গেরিলা সন্ত্রাসের দ্বৈত চাপ মোকাবিলা করতে হবে। এটি পাকিস্তানের অর্থনীতি, সামরিক শক্তি ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপর ভয়াবহ প্রভাব ফেলতে পারে।
পাকিস্তানের জন্য করণীয়:
সীমান্তে সেনা উপস্থিতি আরও জোরদার করা।
আফগানিস্তানের উপর আন্তর্জাতিক চাপ তৈরি করে তালিবান প্রশাসনকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা।
অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা ও কৌশলগত তৎপরতা বাড়িয়ে ‘ঘরের ভেতরকার’ সন্ত্রাসবাদ নির্মূল করা।
বিশ্বমঞ্চে কূটনৈতিকভাবে নিজের অবস্থান শক্তিশালী করা এবং পশ্চিমা প্রচারণার মোকাবিলা করা।
আজকের সংঘর্ষ কেবল শুরু। যদি পাকিস্তান সময়মতো সঠিক সিদ্ধান্ত না নেয়, তাহলে এই সীমান্ত থেকেই আগামী দিনে বৃহত্তর যুদ্ধের আগুন জ্বলতে পারে— যার শিকার হবে সমগ্র দক্ষিণ এশিয়া।