
গত কয়েক মাস ধরে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ” স্ক্যাবিস (Scabies) ” নামক চর্মরোগের প্রাদুর্ভাব উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। এবং কিছুদিন ধরে এটি অতি মাত্রায় বেড়ে উঠেছে যা ভয়ের কারণ! স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা এটিকে ” স্ক্যাবিস আউটব্রেক” হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। স্ক্যাবিস একটি অত্যন্ত সংক্রামক চর্মরোগ, যা Sarcoptes scabiei নামক পরজীবি মাইটের কারণে হয়ে থাকে। ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা, বস্তি, শরণার্থী শিবির এবং শিক্ষার্থীদের আবাসিক হলগুলোতে এই রোগ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত তিন মাসে স্ক্যাবিসে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৪০% বেড়েছে, বিশেষ করে ঢাকা, চট্টগ্রাম , কক্সবাজার ও রোহিঙ্গা শিবিরে এর প্রকোপ বেশি। স্থানীয় হাঁসপাতাল ও কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে প্রতিদিন স্ক্যাবিসের চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।
মূলত স্ক্যাবিস বৃদ্ধির কারণগুলো হলো:
১. অপর্যাপ্ত স্বাস্থ্য সচেতনতা :
অনেকেই স্ক্যাবিসের লক্ষণ চিনতে না পেরে প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসা নেন না।
২. ঘনবসতি ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ: বস্তি, শরণার্থী ক্যাম্প ও ছাত্রাবাসে একই বিছানা বা কাপড় ব্যবহারের মাধ্যমে দ্রুত সংক্রমণ ছড়ায়।
৩. অপরিচ্ছন্নতা : নিয়মিত গোসল না করা, কাপড়-চোপড় ও বিছানা পরিষ্কার না রাখা।
৪. ভুল চিকিৎসা : ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনে নিজে নিজে চিকিৎসা করলে রোগ সম্পূর্ণ সারে না ,বরং পুনরায় সংক্রমণ হয়।
স্ক্যাবিসের লক্ষণগুলো হলো-
– তীব্র চুলকানি ( বিশেষ করে রাতে)
– হাতের আঙ্গুলের ফাঁক, কব্জি, কোমর ও যৌনাঙ্গে লাল ফুসকুড়ি
– চামড়ায় পাতলা , ধূসর বা লাল রেখার মতো দাগ
ঢাকা মেডিকেল কলেজের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন ” স্ক্যাবিস সাধারণত জীবনঘাতি নয়, কিন্তু অবহেলা করলে এটি ত্বকে ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন ( যেমন ইমপেটিগো) সৃষ্টি করতে পাএক্ষেত্রে পরিবারের সবাইকে একসাথে চিকিৎসা নিতে হবে। নাহলে সংক্রমণ হবে।
স্ক্যাবিস থেকে প্রতিকার ও সচেতনতা :
-চিকিৎসা : পারমেথ্রিন ক্রিম (৫%), বেনজাইল বেনজোয়েট লোশন বা আইভারমেক্টিন ট্যাবলেট ( ডাক্তারের পরামর্শে)
– পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা: আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত কাপড়, তোয়ালে ও বিছানার চাদর গরম পানি দিয়ে ধুতে হবে।
– সচেতনতা বাড়ানো : কমিউনিটি লেভেলে স্বাস্থ্য শিক্ষা কার্যক্রম জোরদার করতে হবে।
এছাড়াও , স্বাস্থ্য অধিদপ্তর স্ক্যাবিস নিয়ণ্ত্রণে ” জেলা পর্যায়ে স্বাস্থ্য কর্মীদের প্রশিক্ষণ ” দেয়ার পাশাপাশি ” সচেতনতামূলক লিফলেট ” বিতরণের উদ্যোগ নিয়েছে। এছাড়াও স্ক্যাবিসের ওষুধ সরকারি হাসপাতালগুলোতে বিনামূল্যে বিতরণের পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
স্ক্যাবিস মোটেই অবহেলার রোগ নয়। সঠিক চিকিৎসা , স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা এবং সামাজিক সচেতনতা বাড়ালে এই রোগ নিয়ণ্ত্রণ সম্ভব। স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি স্থানীয় নেতা ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর সমন্বিত উদ্যোগ একান্ত প্রয়োজন এই প্রাদুর্ভাব রোধে।