
” মাথায় গুলি করে আত্নহত্যা করলেন পুলিশ কর্মকর্তা ”
চট্টগ্রামে সুইসাইড নোট লিখে নিজের মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে গুলি করে আত্মহত্যা করেছেন RAB ৭-এ কর্মরত একজন সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি)। বুধবার দুপুর ১২টার দিকে চান্দগাঁও থানার র্যাব-৭ কার্যালয়ের (সিপিসি-২) নিজের চেয়ারে বসেই তিনি আত্মহত্যা করেন। এ পুলিশ কর্মকর্তার নাম পলাশ সাহা। তিনি চট্টগ্রাম অঞ্চলে (RAB-৭) সিনিয়র সহকারী পরিচালক হিসাবে কর্মরত ছিলেন। তিনি গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার তারাশি গ্রামের বিনয় সাহা ও আরতি সাহার সন্তান। লাশের পাশের টেবিল থেকে সুইসাইড নোট উদ্ধার করেছেন সহকর্মীরা। এতে তিনি তার মৃত্যুর জন্য নিজেকেই দায়ী করেন। কাউকে ভালো রাখতে পারেননি উল্লেখ করে বউয়ের জন্য স্বর্ণ ও মায়ের জন্য অন্যান্য সম্পদ রেখে যাওয়ার কথা বলেন। বড় বোনকে এ বিষয়টি সমন্বয় করতে বলেন। পুলিশ জানায়, সুইসাইড নোট পড়ে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে পারিবারিক কলহের জেরেই এ কর্মকর্তা আত্মহত্যার মাধ্যমে ‘চিরমুক্তি’ খুঁজেছেন। RAB-এর পক্ষ থেকে জানানে হয়, পলাশ সাহা ৩৭তম বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের কর্মকর্তা ছিলেন। তিনি এর আগে পুলিশের বিশেষ শাখায় (এসবি) কর্মরত ছিলেন। সর্বশেষ RAB-৭-এ এএসপি হিসাবে কর্মরত ছিলেন। পুলিশে যোগদানের আগে তিনি সাবরেজিস্ট্রার হিসাবে কর্মজীবন শুরু করেন।
RAB-এর পক্ষ থেকে বলা হয়-‘RAB-৭ চট্টগ্রামের বহদ্দারহাট ক্যাম্পে কর্মরত সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার পলাশ সাহা অভিযানের প্রস্তুতি গ্রহণকালে তিনি অস্ত্র ইস্যু করে নিজের অফিস কক্ষে প্রবেশ করেন। তার কিছুক্ষণ পর একটি শব্দ আসে তার কক্ষ থেকে। কর্তব্যরত অন্য RAB সদস্যরা ওই রুমে প্রবেশ করে দেখেন নিজের চেয়ারেই মাথাটা সামনের দিকে ঝোঁকানো অবস্থায় নিস্তেজ হয়ে আছেন পালাশ সাহা। একজন কর্মকর্তা তার হাতের পালস চেক করে দেখেন। সে সময় তার নিজের ইস্যুকৃত পিস্তলটি নিচে পড়ে থাকতে দেখা যায় এবং টেবিলে সুইসাইড নোট পাওয়া যায়।
সহকর্মীরা তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ময়নাতদন্ত শেষে বিস্তারিত জানানো হবে বলে জানায় RAB।
বুধবার দুপুরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে গিয়ে দেখা যায়, নিহতের সহকর্মী RAB সদস্যরা মর্গে ভিড় করছেন। তার পরিচিত সহকর্মীরা নীরবে চোখের পানি ফেলছেন। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) ও RAB এর কর্মকর্তারা বিভিন্ন বিষয় তদারকি করছেন। মর্গে পলাশের স্ত্রীকেও বিষণ্ন অবস্থায় দেখা যায়। সহকর্মীরা জানান, পলাশ চান্দগাঁও ক্যাম্পে ৬ মাস ধরে কর্মরত ছিলেন।
অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ও পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ঘটনাস্থল থেকে নানা আলমত সংগ্রহ করে। বেলা ৩টার দিকে ফ্রিজার অ্যাম্বুলেন্স থেকে লাশ মর্গে প্রবেশ করানো হয়। সাড়ে ৪টার দিকে ময়নাতদন্ত শেষে মর্গ থেকে বের করে ঢাকার উদ্দেশে পাঠানো হয়। গোপালগঞ্জ হলেও পলাশের পরিবার ও অন্য সদস্যরা স্থায়ীভাবে বসবাস করেন ঢাকার সূত্রাপুরের ওয়ারী এলাকায়।
অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) পরিদর্শক মোহাম্মদ ফেরদৌস যুগান্তরকে জানান, ‘পলাশের ডান কানের দেড় ইঞ্চি উপরে গুলির আঘাত রয়েছে। রক্তক্ষরণের কারণে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা গেছেন বলে তাদের ধারণা।’ RAB -৭-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল হাফিজুর রহমান জানান, ‘দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে নিজ অফিস কক্ষে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পাওয়া গেছে পলাশকে। তিনি আত্মহত্যা করেছেন। বিষয়টি পারিবারিক।’
চিরকুটে যা রয়েছে : ‘আমার মৃত্যুর জন্য মা এবং বউ কেউ দায়ী না। আমিই দায়ী। কাউকে ভালো রাখতে পারলাম না। বউ যেন সব স্বর্ণ নিয়ে যায় এবং ভালো থাকে। মায়ের দায়িত্ব দুই ভাইয়ের ওপর। তারা যেন মাকে ভালো রাখে। স্বর্ণ বাদে যা আছে তা মায়ের জন্য। দিদি যেন কো-অর্ডিনেট করে।’
আত্মহত্যার কারণ জানালেন পলাশের ভাই : কোটালীপাড়া (গোপালগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, পলাশের মেজো ভাই নন্দ লাল সাহা বলেন, দুই বছর আগে ফরিদপুরে চৌধুরীপাড়ায় পলাশ বিয়ে করে। বিয়ের ছয়-সাত মাস পর থেকে পারিবারিক কলহ লেগেই থাকত। প্রতিদিন কিছু না কিছু নিয়ে পলাশের স্ত্রী সুস্মিতা সাহা পরিবারে ঝামেলা করত। আমার মা আরতি সাহা পলাশের সঙ্গে চট্টগ্রামে থাকতেন-এটা পলাশের স্ত্রী মেনে নিতে পারত না। সে সব সময় মাকে গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়ার জন্য পলাশকে চাপ দিত। পলাশ কিছুতেই মাকে বাড়িতে পাঠিয়ে দিতে চাইত না। সে মা ও তার স্ত্রী দুজনকেই ভালোবাসত। বুধবার সকালে সামান্য বিষয় নিয়ে আমার মা আরতি সাহা ও ভাই পলাশের গায়ে হাত তোলে সুস্মিতা। এটা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারেনি আমার ভাই। আর এ কারণেই পলাশ আত্মহত্যা করেছে বলে আমাদের ধারণা।