এই তরুণ উইঙ্গারের অসাধারণ দক্ষতা আর জাদুকরী পারফরম্যান্সে ভর করে বার্সেলোনা তাদের নগর প্রতিদ্বন্দ্বী এস্পানিওলকে তাদেরই ঘরের মাঠে ২-০ গোলে পরাজিত করে ২৮তম বারের মতো লা লিগার চ্যাম্পিয়নশিপের মুকুট নিজেদের করে নিয়েছে।ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে দেখা যায়, বার্সেলোনা তাদের দীর্ঘ ইতিহাসে নিজেদের স্টেডিয়ামের চেয়ে প্রতিপক্ষের মাঠে লা লিগা শিরোপা নিশ্চিত করতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। বিশেষ করে নগর প্রতিদ্বন্দ্বী এস্পানিওলের মাঠ যেন বার্সার জন্য পয়মন্ত। এর আগে ২০১৩ সালে রিয়াল মাদ্রিদের ড্র এবং ২০২৩ সালে দলের তরুণ তুর্কি গাভি ও পেদ্রির নৈপুণ্যে এস্পানিওলের মাঠেই লিগ জয় নিশ্চিত করেছিল কাতালান ক্লাবটি। এবারও সেই ধারা বজায় থাকলো ইয়ামালের হাত ধরে।আরসিডিই স্টেডিয়ামে বার্সেলোনার লক্ষ্য ছিল পরিষ্কার – এস্পানিওলকে হারালেই চ্যাম্পিয়ন। এদিন লামিন ইয়ামাল যেন একাই একটি দল। পুরো ম্যাচে তার পায়ের জাদু দেখা যায়। শুধু গোল করাই নয়, সতীর্থকে দিয়ে গোল করানো এবং প্রতিপক্ষের রক্ষণভাগে ত্রাস সৃষ্টি করাই ছিল তার প্রধান কাজ। তার বিদ্যুৎগতির দৌড়, নিখুঁত পাস এবং চোখ ধাঁধানো ড্রিবলিং এস্পানিওলের রক্ষণভাগকে ব্যতিব্যস্ত করে তোলে। ইয়ামালের একক নৈপুণ্যেই যেন ভরসা খুঁজে পায় পুরো বার্সা দল।ম্যাচের ৫৩ মিনিটে অপেক্ষার অবসান ঘটান এই তরুণ তুর্কি। ডান দিক থেকে ক্ষিপ্র গতিতে বক্সে ঢুকে নিজের বাঁ পায়ের কার্ভ শটে এস্পানিওলের গোলরক্ষককে পরাস্ত করেন ইয়ামাল, যা দর্শকদের মনে ইউরো সেমিফাইনালে ফ্রান্সের বিপক্ষে করা তার সেই বিখ্যাত গোলের স্মৃতি ফিরিয়ে আনে। এরপর ম্যাচের একেবারে শেষ মুহূর্তে, অতিরিক্ত সময়ে (৯৫ মিনিটে) ফেরমিন লোপেজের গোলে জয় নিশ্চিত হয় বার্সেলোনার। এই গোলের কারিগরও ছিলেন সেই ইয়ামাল, যার বাড়ানো পাস থেকে লোপেজ সহজেই বল জালে জড়ান।ম্যাচের শেষদিকে এস্পানিওলের ডিফেন্ডার লিয়ান্দ্রো কাবরেরা লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়লে স্বাগতিকরা ১০ জনের দলে পরিণত হয়। তবে একজন কম নিয়েও এস্পানিওল বার্সাকে চাপে রাখার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু এদিন ভাগ্য যেন বার্সেলোনার পক্ষেই লেখা ছিল।এই জয়ের ফলে বার্সেলোনার পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৬, যা দ্বিতীয় স্থানে থাকা চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল মাদ্রিদের চেয়ে ৭ পয়েন্ট বেশি। হাতে আর মাত্র দুটি ম্যাচ বাকি থাকায়, বার্সেলোনার কোচ হান্সি ফ্লিকের দলের পক্ষে আর শিরোপা হাতছাড়া হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।বার্সেলোনার কোচ হিসেবে প্রথম মৌসুমেই ট্রেবল জয়ের হাতছানি ফ্লিকের সামনে। এর আগে তিনি কোপা দেল রে এবং স্প্যানিশ সুপার কাপ জিতেছেন। এখন শুধু চ্যাম্পিয়নস লিগের সোনালী ট্রফিটিই তার চাই। তবে লা লিগার এই জয় ফ্লিকের জন্য নিঃসন্দেহে একটি বড় অর্জন।লামিন ইয়ামালের এই অসাধারণ পারফরম্যান্স শুধু বার্সেলোনার সমর্থকদেরই আনন্দিত করেনি, বরং বিশ্বজুড়ে ফুটবলপ্রেমীরাও এই তরুণ প্রতিভার উত্থান দেখে মুগ্ধ। বার্সেলোনার এই শিরোপা জয় নিঃসন্দেহে ইয়ামালের ক্যারিয়ারে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হয়ে থাকবে।