
অবশেষে সরকারি চাকরিজীবীদের দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান হতে চলেছে। আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ পর্যন্ত মহার্ঘ ভাতা (Dearness Allowance) ঘোষণার পরিকল্পনা করছে সরকার। অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ এই প্রস্তাব চূড়ান্ত করতে কাজ করছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এই নতুন ভাতা চালু হলে সরকারের বেতন-ভাতা খাতে প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত ব্যয় হতে পারে।
জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের চালু করা ৫ শতাংশ বিশেষ প্রণোদনা ভাতা বাতিল করে তার পরিবর্তে এই মহার্ঘ ভাতা চালুর পরিকল্পনা করা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার সম্মতি মিললে এই মহার্ঘ ভাতার বিষয়টি বাজেট বক্তৃতায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ?
দীর্ঘদিন ধরে সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী পরিষদ নতুন পে-কমিশন গঠনসহ মূল বেতনের ৫০ শতাংশ মহার্ঘ ভাতা কার্যকরের দাবি জানিয়ে আসছিল। পরিষদের মহাসচিব নিজাম উদ্দিন আহমেদ সরকারের এই উদ্যোগকে ‘প্রশংসনীয়’ উল্লেখ করে বলেছেন, ভাতার পরিমাণ আরও বেশি হলে ভালো হতো।
অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও সরকারের সিদ্ধান্ত
গত জানুয়ারি মাস থেকেই সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য মহার্ঘ ভাতা কার্যকরের পরিকল্পনা ছিল। তবে সে সময় অর্থনৈতিক সংকটের কারণে অর্থনীতিবিদদের সমালোচনার মুখে সরকার পিছিয়ে এলেও, এখন নতুন করে এই উদ্যোগ নিয়েছে।
অর্থ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, মহার্ঘ ভাতা সংস্থানের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিবকে আহ্বায়ক করে গত ডিসেম্বরে একটি সাত সদস্যের পর্যালোচনা কমিটি গঠন করা হয়েছিল। ওই কমিটি পর্যালোচনা শেষে গ্রেডভিত্তিক ১০ থেকে ২০ শতাংশ ভাতা দেওয়ার সুপারিশ করে। সেই সুপারিশের ভিত্তিতেই এখন সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ পর্যন্ত মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে সরকার।
সংশ্লিষ্ট সূত্র অনুযায়ী, আগামী ২০ মে অর্থ উপদেষ্টার নেতৃত্বে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে অর্থ উপদেষ্টা জনপ্রশাসন সংক্রান্ত কমিটির প্রধান হিসেবে বিষয়টি তুলে ধরবেন। অর্থ বিভাগ ইতোমধ্যে বৈঠকে উপস্থাপনের জন্য খসড়া প্রস্তাব তৈরি করেছে।
প্রস্তাব অনুযায়ী মহার্ঘ ভাতা ঘোষণা করা হলে সরকারি চাকরিজীবীরা বাড়তি ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট পাবেন না। এ হিসেবে বিদ্যমান প্রায় সাড়ে ১৪ লাখ সরকারি চাকরিজীবীকে মূল বেতনের ২০ শতাংশ হারে মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে আগামী বাজেটে বাড়তি ব্যয় হবে প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা।
অর্থ বিভাগের খসড়ায় ১১তম থেকে ২০তম গ্রেডের কর্মচারীদের সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ এবং প্রথম থেকে দশম গ্রেডের কর্মচারীদের ১০ বা ১৫ শতাংশ হারে ভাতা দেওয়ার বিকল্প প্রস্তাবও রয়েছে। প্রথম থেকে দশম গ্রেডে ১০ শতাংশ দেওয়া হলে ৬ হাজার কোটি টাকা এবং ১৫ শতাংশ দেওয়া হলে প্রায় সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা বাড়তি অর্থের প্রয়োজন হবে।
চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন-ভাতা বাবদ বরাদ্দ ছিল ৮২ হাজার ৯৯০ কোটি টাকা। মহার্ঘ ভাতা যুক্ত হলে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য এই বরাদ্দ প্রায় ৯৭ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছাতে পারে।
সাধারণত সরকার প্রতি ৫ বছর পর পর নতুন বেতন কাঠামো ঘোষণা করে। তবে ২০১৫ সালের জুলাইয়ে কার্যকর হওয়া অষ্টম বেতন কাঠামোয় বলা হয়েছিল যে, ভবিষ্যতে আর আলাদা কাঠামো ঘোষণা করা হবে না, বরং প্রতি বছর জুলাই মাসে ৫ শতাংশ বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে। গত জাতীয় নির্বাচনের আগে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিয়মিত ৫ শতাংশ বৃদ্ধির পাশাপাশি আরও ৫ শতাংশ প্রণোদনা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন।