
গবেষণায় বলা হয়েছে, স্ত্রীর পরামর্শেই অনেক পুরুষের সফলতা লুকিয়ে থাকে। এটি একটি চমকপ্রদ বিষয় হলেও, মনোবিজ্ঞানী এবং সামাজিক গবেষকরা নানা ধরণের ডাটা বিশ্লেষণের মাধ্যমে এটি প্রতিষ্ঠিত করেছেন। বিশেষত, ২০১৪ সালে Harvard Business Review-এ প্রকাশিত একটি গবেষণায় উঠে এসেছে যে, পুরুষেরা যেভাবে স্ত্রীর পরামর্শ গ্রহণ করেন এবং তাদের পরামর্শের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেন, তা তাদের জীবনে বড় ধরনের সাফল্য এনে দেয়। স্ত্রীদের পরামর্শের প্রভাব একাধিক দিক থেকে পুরুষদের জীবনকে পরিবর্তন করে, যেমন ব্যক্তিগত জীবন, কর্মজীবন, এবং মানসিক স্থিতিশীলতা।
এটি যে শুধুমাত্র একজন ব্যক্তির সম্পর্ক বা পারিবারিক জীবনে প্রভাব ফেলে, তা নয়, বরং এটি তাদের কর্মজীবনেও দৃশ্যমান। University of Texas এবং University of Chicago-এর যৌথ গবেষণায় দেখা গেছে যে, পুরুষেরা তাদের স্ত্রীর পরামর্শ গ্রহণ করলে, তারা পেশাগত জীবনে আরো সফল হন। গবেষণায় এমনও দেখা গেছে যে, পরিবারে স্ত্রীর মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া পুরুষদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস সৃষ্টি করে এবং সেই আত্মবিশ্বাস তাদের কর্মক্ষেত্রেও প্রতিফলিত হয়। অনেক সময় স্ত্রীরা তাদের স্বামীদের এমন কিছু দিকনির্দেশনা দেন, যা স্বামীর নিজের কাছে অজানা থাকে, বা যা তারা কখনো নিজে চিন্তা করেননি।
একজন স্ত্রীর পরামর্শে পুরুষেরা এমন সিদ্ধান্ত নেন, যা তাদের ক্যারিয়ারের উন্নতির জন্য সহায়ক হতে পারে। স্ত্রীরা শুধুমাত্র নিজেদের অভিজ্ঞতা বা ভালোবাসার জায়গা থেকে পরামর্শ দেন না, বরং তাদের সামাজিক এবং মানসিক প্রজ্ঞার মাধ্যমে তাদের সঙ্গীকে সঠিক পথ দেখান। গবেষণায় উঠে এসেছে যে, স্ত্রীরা তাদের স্বামীদের জন্য এমন একটি নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করেন, যেখানে তারা মুক্ত মনে, চিন্তা-ভাবনা করে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। এর ফলে পুরুষেরা তাদের কর্মজীবনে আরও দক্ষ এবং সফল হন।
স্ত্রীদের পরামর্শের আরেকটি দিক হলো, এটি পুরুষদের মানসিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রদান করে। একজন পুরুষ যদি তার স্ত্রীর পরামর্শ গ্রহণ করেন, তবে তার মধ্যে এক ধরনের আবেগিক সমর্থন তৈরি হয়, যা তাকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে। স্ত্রীদের কাছ থেকে এই ধরনের মানসিক সহায়তা এবং পরামর্শ পুরুষদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি তাদের মাঝে কর্মক্ষেত্রে বা পারিবারিক জীবনে যে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে আত্মবিশ্বাসী করে তোলে। তারা জানেন যে, তাদের স্ত্রীর পরামর্শে তারা একটি শক্তিশালী সহায়তাকে পাশে পেয়েছে, যা তাদের যেকোনো সঙ্কটে বা চ্যালেঞ্জে সাহায্য করে।
এছাড়া, স্ত্রীরা পুরুষদের মধ্যে যে ধরনের আত্মবিশ্বাস সৃষ্টি করেন, তা তাদেরকে কঠিন পরিস্থিতিতেও সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে। তাদের সমর্থন পুরুষদের মানসিক চাপ কমায়, এবং তাদের স্বাভাবিক চিন্তা প্রক্রিয়া আরও পরিষ্কার হয়। পুরুষেরা যদি একা সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন, তবে অনেক সময় সিদ্ধান্তগুলো যথাযথ হতে পারে না, কিন্তু স্ত্রীর মতামত ও সমর্থন পাওয়া পুরুষদের জন্য আরও সুস্থ, স্থিতিশীল, এবং সফল জীবনের পথ তৈরি করে।
নিষ্কর্ষে, এটি বলা যেতে পারে যে, স্ত্রীর পরামর্শ পুরুষের সফলতার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়ায়। এর প্রমাণ গবেষণা এবং বাস্তব জীবনে নানা উদাহরণে পাওয়া যায়। গবেষকরা একে এক ধরনের সামাজিক এবং মানসিক শক্তি হিসেবে চিহ্নিত করেছেন, যা পুরুষদের কর্মজীবন এবং ব্যক্তিগত জীবনে সফলতা অর্জনে সাহায্য করে।