কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার জয়সিদ্ধি ইউনিয়নের আলগাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা, প্রায় ৩ হাজারের বেশি কবর খোঁড়া গোরখোদক মনু মিয়ার ঘোড়াটি দুর্বৃত্তরা মেরে ফেলেছে—এমন খবর জানতে পেরে মুগ্ধ ও অনুপ্রাণিত হয়েছেন অভিনেতা খায়রুল বাসার। শুরুতে তিনি মনু মিয়াকে একটি নতুন ঘোড়া কিনে দিতে চাইলেও, মনু মিয়ার সাথে দেখা করার পর তার মানসিকতা তাকে আরও গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে।

গতকাল সোমবার (১৯ মে, ২০২৫) এই খবর পেয়ে খায়রুল বাসার একটি ভিডিও পোস্ট করে ক্যাপশনে লিখেছিলেন, "মনু মিয়াকে আমি ঘোড়া কিনে দিতে চাই। বিনিময়ে আমার কবর খোঁড়া পর্যন্ত আল্লাহ উনাকে বাঁচিয়ে রাখুন। কেউ যদি মনু মিয়ার সাথে যোগাযোগের ব্যবস্থা করে দিতে পারেন, কৃতজ্ঞ থাকব।"

পরে সোমবার রাতেই খায়রুল বাসার হাসপাতালে গিয়ে মনু মিয়ার সঙ্গে দেখা করেন। মঙ্গলবার (২০ মে, ২০২৫) তিনি ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাসে মনু মিয়ার সাথে তার আলোচনার অনুভূতি তুলে ধরেন। খায়রুল বাসার লিখেছেন, "মনু চাচা দোয়া ছাড়া কিছু চান না আপনাদের কাছে। উনি আপনাদের জন্য দোয়া করেন—আপনারা ভালো থাকুন, সুন্দর থাকুন।"

মনু মিয়া জানান, ঘোড়ার জন্য তার কোনো কষ্ট নেই, এমনকি কারা তার ঘোড়াকে হত্যা করেছে তা নিয়েও তার কোনো ক্ষোভ নেই। মনু চাচা বিশ্বাস করেন, তার ঘোড়ার সাথে তার যাত্রা আল্লাহ এ পর্যন্তই নির্ধারণ করেছিলেন। তিনি বলেন, 'সে মারা গেছে তো চোখে দেখি নাই, তাই কষ্ট যেটুকু হবার তাও হচ্ছে না।'

খায়রুল বাসার আরও লেখেন, "মানুষের বাইক-সাইকেলের শখ থাকে। আমি যতোটা বুঝলাম, উনার শখ ছিল হাতেম তাঈ হওয়া—মানুষের প্রয়োজনে ঘোড়ার পিঠে চড়ে মানুষের দুয়ারে পৌঁছে যাওয়া। উনি উনার সাধ্যের মধ্যে সবচেয়ে মহৎ কাজটিই করে গেছেন আজীবন।" মনু মিয়া দ্রুত সুস্থ হয়ে আবার তার শখের কাজে ফিরতে চান বলেও খায়রুল বাসার জানান। তিনি সবার কাছে তার জন্য দোয়া চেয়েছেন।

কারো কাছ থেকে কিছু নিতে চান না উল্লেখ করে খায়রুল বাসার জানান, মনু মিয়া কারো কাছে ঘোড়া বা অন্য কিছু চান না, কেবল দোয়া চান। তার কারো প্রতি কোনো অভিযোগ বা অনুযোগ নেই। তিনি বলেছেন, সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলে প্রয়োজনে সাতটা ঘোড়া কিনতে পারবেন। মনু মিয়ার বিশ্বাস, যা হওয়ার হয়ে গেছে, আল্লাহ যা নির্ধারণ করেন, তাই হবে। তিনি মনে করেন—সবই নসিব।