চুয়াডাঙ্গার দর্শনার ইমিগ্রেশন ভবন থেকে পুলিশ কনস্টেবল শামিম রেজা সাজুর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধারের এক মাসেরও বেশি সময় পর তার সাত সহকর্মীর বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। নিহত পুলিশ সদস্যের বাবা বাদী হয়ে মঙ্গলবার (২০ মে, ২০২৫) দুপুরে দর্শনা থানা আমলি আদালতে এই মামলাটি করেন।
আদালতের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. তৌহিদুল ইসলাম মামলাটি আমলে নিয়ে তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছেন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি)। বাদীপক্ষের আইনজীবী নাজমুল হাসান লাভলু জানিয়েছেন, বাদীর অভিযোগ আদালত গ্রহণ করেছেন এবং সিআইডিকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
জানা গেছে, কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার ঝুটিয়াডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা শামিম রেজা সাজু চুয়াডাঙ্গার দর্শনা জয়নগর আন্তর্জাতিক চেকপোস্টে ইমিগ্রেশন বিভাগে কর্মরত ছিলেন। গত ১৮ এপ্রিল সকালে চেকপোস্টের নতুন ভবনের দোতলার একটি কক্ষ থেকে তার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ওই ঘটনায় দর্শনা থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা (ইউডি) করা হয়েছিল।
শামিমের মরদেহ উদ্ধারের এক মাসের বেশি সময় পর তার বাবা হাসেম আলী ফরাজী আদালতে এই হত্যা মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় সহকারী পুলিশ পরিদর্শক (এএসআই) তারেক মাহমুদ, লাভলুর রহমান, মিঠুন হোসেন, সহিদুল ইসলাম, কনস্টেবল মেহেদী হাসান, ইমিগ্রেশন বিভাগের ইনচার্জ সহকারী পরিদর্শক (এসআই) রমজান আলী এবং কনস্টেবল সোহেল রানাকে আসামি করা হয়েছে।
মামলায় বাদী অভিযোগ করেন যে, তার ছেলে শামিম রেজা বিবাহিত ছিলেন এবং তার পাঁচ বছর বয়সী একটি ছেলে আছে। পুত্রবধূ (শামিমের স্ত্রী) একমাত্র সন্তান নিয়ে তার বাড়িতে থাকতেন, আর শামিম চেকপোস্টের নতুন ভবনের দোতলায় অন্যান্য সহকর্মীদের সঙ্গে থাকতেন। তাদের সংসার জীবনে কোনো অশান্তি ছিল না।
বাদীর অভিযোগ অনুযায়ী, দর্শনা ইমিগ্রেশনে বদলি হওয়ার পর থেকেই শামিম রেজা বৈষম্যের শিকার হচ্ছিলেন। মামলার ১ থেকে ৬ নম্বর আসামিরা তাকে বিভিন্ন খুঁটিনাটি কারণে মানসিকভাবে চাপে রাখতেন এবং কারণে-অকারণে তার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার ও অকথ্য ভাষায় গালাগাল করতেন। শামিম প্রতিবাদ করায় ওই ছয়জন তাকে খুন করার হুমকি দিতেন। এসব কারণে শামিম মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন।
মামলার এজাহারে আরও দাবি করা হয়েছে যে, গত ১৭ এপ্রিল ১ থেকে ৫ নম্বর আসামিরা কনস্টেবল শামিমকে খুন করার হুমকি দিলে তিনি নিজ গ্রামের বাসিন্দা সহকর্মী (৭ নম্বর আসামি) সোহেল রানাকে হোয়াটসঅ্যাপে এই বিষয়টি জানান। কিন্তু সোহেল রানা বিষয়টি শামিমের বাড়ির কাউকে না জানিয়ে অন্যদের (ছয় আসামি) তা জানিয়ে দেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে আসামিরা একে অপরের সহযোগিতায় ১৭ এপ্রিল রাত পৌনে ১১টার পর যেকোনো সময় শামিমকে হত্যা করে কক্ষের মধ্যে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে মরদেহ ঝুলিয়ে আত্মহত্যা বলে প্রচার করে।