ম্যানচেস্টার সিটি ছাড়ার ঘোষণা দেওয়া কিংবদন্তি মিডফিল্ডার কেভিন ডি ব্রুইনার বিদায় যেন এক অশ্রুসিক্ত অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটাল। গতকাল রাতে ইতিহাদ স্টেডিয়ামের গ্যালারি থেকে শুরু করে ধারাভাষ্যকক্ষ, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এমনকি কোচিং ডাগআউট পর্যন্ত সবকিছুই ছিল এই বেলজিয়ান তারকাময়। পেপ গার্দিওলা নিজেই দিনটিকে 'কষ্টের দিন' হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন এবং ডি ব্রুইনার বিদায়ে তার কান্না ফুটবলপ্রেমীদের হৃদয়ে দীর্ঘ দিন গেঁথে থাকবে।
গত এক দশকে প্রিমিয়ার লিগে ম্যানচেস্টার সিটির নিরঙ্কুশ আধিপত্যের পেছনে অন্যতম প্রধান কারিগর ছিলেন কেভিন ডি ব্রুইনা। এই সময়ে সিটি শেষ ৮ মৌসুমের মধ্যে ৬টি লিগ শিরোপা জিতেছে, যার ৪টি আবার টানা। ৬টি প্রিমিয়ার লিগ ছাড়াও ডি ব্রুইনা সিটির হয়ে একটি চ্যাম্পিয়নস লিগ, দুটি এফএ কাপ এবং পাঁচটি লিগ কাপ শিরোপা জিতেছেন।
গার্দিওলার অধীনে পুরোটা সময় ডি ব্রুইনা ছিলেন সিটির মিডফিল্ডের প্রাণকেন্দ্র, দলের সব খেলা তাকে ঘিরেই আবর্তিত হতো। তার কার্যকারিতা এবং নান্দনিকতা তাকে অনন্য এক পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিল। ৩৩ বছর বয়সী এই তারকার বিদায় তাই সহজ ছিল না, কিন্তু সব ভালো কিছুরই নাকি একদিন শেষ হয়, সেই নিয়ম মেনেই সিটিতে নিজের শেষ ম্যাচটা খেলে ফেললেন তিনি।
২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে সিটির হয়ে অভিষেক হওয়া ডি ব্রুইনা লিগে ২৮৪ ম্যাচে ৭২ গোল এবং ১১৯টি গোলে সহায়তা করেছেন। সব মিলিয়ে সিটির জার্সিতে ৪২১ ম্যাচে তার গোল সংখ্যা ১০৮ এবং অ্যাসিস্ট ১৭৭টি।
ডি ব্রুইনাকে বিদায় জানাতে সিটিজেনরা কোনো আয়োজনে কমতি রাখেনি। পুরো স্টেডিয়াম অন্ধকার করে তার জন্ম দেওয়া স্মরণীয় মুহূর্তগুলো দেখানো হয়। সেই অন্ধকার ভেদ করে আলোতে হেঁটে আসেন ডি ব্রুইনা নিজে, সাথে ছিলেন তার পরিবারের সদস্যরা।
দর্শকদের মোবাইলের ফ্ল্যাশলাইটের আলো এবং মাঠের আলো মিলেমিশে একাকার হয়ে তাকে যেন উষ্ণ আলিঙ্গন জানায়। ক্লাবের খেলোয়াড়-কর্মকর্তারা তাকে অভিবাদন জানাতে দুই পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন। ডি ব্রুইনার অবদানকে স্মরণীয় করে রাখতে ইতিহাদ স্টেডিয়ামের বাইরে তার ভাস্কর্য বানানোর ঘোষণাও দিয়েছে সিটি কর্তৃপক্ষ।
বিদায়ী মুহূর্তে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করে ডি ব্রুইনা বলেছেন, "আমি সৃষ্টিশীলতা এবং আবেগের সঙ্গে খেলার চেষ্টা করেছি। আমি ফুটবল উপভোগ করতে চেয়েছি। আমি আশা করি, সবাই সেটা উপভোগ করেছেন। ক্লাবের ভেতরে-বাইরে সবাই আমার সেরাটা বের করে আনতে সাহায্য করেছে। আর আমার সামনে থাকা এই মানুষগুলোই আমাকে আগের চেয়ে ভালো বানিয়েছে। এই মানুষগুলোর সঙ্গে খেলতে পারাটা সম্মানের।"
প্রিয় শিষ্যকে নিয়ে গার্দিওলা বলেছেন, "সবাই দেখেছে ম্যানচেস্টারের মানুষদের সঙ্গে সে এবং তার পরিবার কতটা জড়িয়ে আছে। তারা তাকে কতটা ভালোবাসে। শিরোপা এবং সে যা জিতেছে সব কিছুই দারুণ। কিন্তু ১০ বছর পর কেউ যখন এমন সম্মান পায়, এর চেয়ে ভালো কিছু হতে পারে না। এটা আমাদের জন্য কষ্টের দিন এবং আমরা তাকে মিস করব। এটা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই।"