ছবি : সংগ্রহীত

আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে বাসা-বাড়ি, প্রতিষ্ঠান ও বিপণি বিতানের নিরাপত্তা নিশ্চিতে একগুচ্ছ পরামর্শ দিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।

মঙ্গলবার (২৭ মে) ডিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এই নির্দেশনাগুলো দেওয়া হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, ডিএমপি ঈদুল আজহায় বাসা-বাড়ি, প্রতিষ্ঠান, বিপণি বিতান, পশু পরিবহন এবং পশুর হাটের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। ডিএমপির গৃহীত পদক্ষেপের পাশাপাশি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে নিরাপত্তা ও সচেতনতা বৃদ্ধি পেলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরও উন্নত হবে এবং অপরাধ দমনে বেশি সফলতা আসবে বলে ডিএমপি মনে করে।
ঢাকাবাসীর জন্য ১৮টি নির্দেশনা

নিরাপত্তা নিশ্চিতে ঢাকাবাসীকে ১৮টি নির্দেশনা মেনে চলার অনুরোধ জানিয়েছে ডিএমপি:

১. ফিটনেসবিহীন যানবাহন ও নৌযানে কোরবানির পশু পরিবহন করা যাবে না। পশুবাহী পরিবহনের সামনে নির্দিষ্ট গন্তব্য ও হাটের নাম লিখে রাখতে হবে। ট্রাক, লঞ্চ বা ট্রলারে ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত পশু পরিবহন করা যাবে না এবং নির্দিষ্ট স্থানে পশু লোড-আনলোড করতে হবে।

২. পশুর হাটে অজ্ঞানপার্টি ও মলমপার্টি থেকে সাবধান থাকতে হবে। অপরিচিত কারও দেওয়া কোনো কিছু খাওয়া যাবে না। জালনোট সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে এবং লেনদেনের সময় সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। পশু বিক্রির অর্থ ব্যাংকে জমা রাখা ও নগদ অর্থ স্থানান্তরে মানি এস্কর্ট সেবা গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

৩. কোরবানির পশু পরিবহন ও পশুর হাটে চাঁদাবাজি সংক্রান্ত কোনো তথ্য থাকলে নিকটস্থ পুলিশকে জানাতে হবে। অনলাইনে কোরবানির পশু কেনার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

৪. (বিজ্ঞপ্তিতে ৪ নম্বর নির্দেশনাটি দেওয়া হয়নি, ৫ নম্বর থেকে শুরু হয়েছে।)

৫. বাসা-বাড়ি, অ্যাপার্টমেন্ট, ব্যাংক-বীমাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও বিপণি-বিতানের নিরাপত্তায় নিয়োজিত নিরাপত্তা রক্ষীদের ডিউটি জোরদার করতে হবে। যেকোনো অনুপ্রবেশ রোধে দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা নজরদারির ব্যবস্থা রাখতে হবে। সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা তদারকির জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। প্রতিষ্ঠানের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীকে একসাথে ছুটি না দিয়ে একটি অংশকে দায়িত্বপালনে নিয়োজিত রাখা যেতে পারে।

৬. বাসা-বাড়ি ও প্রতিষ্ঠান ত্যাগের পূর্বে দরজা-জানালা সঠিকভাবে তালাবদ্ধ করে যেতে হবে। প্রয়োজনে একাধিক তালা ব্যবহার করা যেতে পারে। দরজা-জানালা দুর্বল থাকলে তা মেরামত করে সুরক্ষিত করতে হবে।

৭. বাসা-বাড়ি, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও বিপণি-বিতানে পর্যাপ্ত সংখ্যক সিসি ক্যামেরা স্থাপন করতে হবে এবং সেগুলোর সচল থাকা নিশ্চিত করতে হবে। বাসা-বাড়ির মূল দরজায় অটোলক ও নিরাপত্তা অ্যালার্মযুক্ত তালা ব্যবহার করা যেতে পারে। রাতে বাসা ও প্রতিষ্ঠানের চারপাশ পর্যাপ্ত আলোকিত রাখতে হবে।

৮. অর্থ, মূল্যবান সামগ্রী ও দলিল নিরাপদ স্থানে বা নিকট আত্মীয়ের হেফাজতে রেখে যেতে হবে। প্রয়োজনে ব্যাংক লকারের সহায়তা নেওয়া যেতে পারে।

৯. বাসা-বাড়ি ত্যাগের পূর্বে যে সকল প্রতিবেশী বা পাশের ফ্ল্যাটের অধিবাসী ঢাকায় থাকবেন, তাদের বাসার প্রতি খেয়াল রাখার অনুরোধ করতে হবে এবং ফোনে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতে হবে।

১০. ভাড়াটিয়াদের আগেই বাসার মালিককে ঈদ উপলক্ষে বাসা ত্যাগের বিষয়টি অবহিত করতে হবে।

১১. অনুমতি ছাড়া কেউ যেন বাসা বা প্রতিষ্ঠানে প্রবেশ করতে না পারে সে বিষয়ে নিরাপত্তাকর্মীকে সতর্ক করতে হবে ও প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করতে হবে। বাসা বা প্রতিষ্ঠানের গাড়ির গ্যারেজ সুরক্ষিত রাখতে হবে। বাসার জানালা ও দরজার পাশে কোনো গাছ থাকলে তার অবাঞ্ছিত শাখা-প্রশাখা কেটে ফেলতে হবে, যাতে অপরাধীরা গাছের শাখা-প্রশাখা ব্যবহার করে প্রবেশ করতে না পারে।

১২. বাসা-বাড়ি বা প্রতিষ্ঠান ত্যাগের পূর্বে লাইট, ফ্যানসহ অন্যান্য ইলেকট্রিক লাইনের সুইচ, পানির ট্যাপ, গ্যাসের চুলা ইত্যাদি বন্ধ করা হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত করতে হবে।

১৩. মহল্লা বা বাড়ির সামনে সন্দেহজনক কাউকে বা দুস্কৃতকারীকে ঘোরাফেরা করতে দেখলে স্থানীয় পুলিশ ফাঁড়ি ও থানাকে অবহিত করতে হবে। ঈদে মহল্লা বা বাসায় কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে বা ঘটার সম্ভাবনা থাকলে তা স্থানীয় পুলিশ ফাঁড়ি ও থানাকে অবহিত করতে হবে।

১৪. যাত্রীদের পর্যাপ্ত সময় নিয়ে ঈদের ভ্রমণ পরিকল্পনা করার অনুরোধ করা হচ্ছে। ভ্রমণকালে নিজের ও পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় রাখতে হবে। চালককে দ্রুত গতিতে গাড়ি চালানোর তাগিদ দেওয়া যাবে না। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অতিরিক্ত যাত্রী হয়ে বাসের ছাদ, ট্রাক, পিকআপ ও অন্যান্য পণ্যবাহী যানবাহনে ভ্রমণ করা যাবে না।

১৫. রাস্তা পারাপারে জেব্রা ক্রসিং বা ফুট ওভারব্রিজ ব্যবহার করতে হবে। যেখানে জেব্রা ক্রসিং বা ফুট ওভারব্রিজ নেই সেখানে যানবাহনের গতিবিধি দেখে নিরাপদে রাস্তা পার হতে হবে। এক্ষেত্রে প্রয়োজনে পুলিশের সহায়তা নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

১৬. ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে বেপরোয়া গতিতে বা জয় রাইডিং করা যাবে না। এতে জীবন বিপন্ন হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। অপরিচিত কোনো ব্যক্তির নিকট থেকে খাবার গ্রহণ করা যাবে না।

১৭. লাইসেন্সবিহীন অদক্ষ, অপেশাদার, ক্লান্ত বা অসুস্থ চালককে যাত্রীবাহী বাস ও গাড়ি চালাতে না দিতে বাস মালিকদের অনুরোধ করা হচ্ছে। চালক যাতে নিয়ম মেনে গাড়ি চালায় এবং ঝুঁকিপূর্ণ ওভার টেকিং না করে সেজন্য চালককে নির্দেশ দিতে হবে। বাসে অতিরিক্ত যাত্রী ওঠানো যাবে না। যাত্রী পরিবহনে ফিটনেসবিহীন গাড়ি রাস্তায় বের করা যাবে না।

১৮. বেপরোয়াভাবে ওভার স্পিডে গাড়ি চালানো ও ঝুঁকিপূর্ণ ওভার টেকিং না করতে বাস চালকদের অনুরোধ করা হচ্ছে। ক্লান্ত বা অবসাদগ্রস্ত বা অসুস্থ অবস্থায় গাড়ি চালাবেন না। ড্রাইভিং লাইসেন্সসহ গাড়ির প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সবসময় সাথে রাখুন। আঞ্চলিক সড়ক ও মহাসড়কে চলাচলের ক্ষেত্রে পুলিশের নির্দেশনা মেনে চলুন।

ডিএমপি জরুরি প্রয়োজনে সহায়তার জন্য নিম্নলিখিত নম্বরে যোগাযোগের কথা বলেছে: ডিএমপি কন্ট্রোল রুম: ০১৩২০-০৩৭৮৪৫, ০১৩২০-০৩৭৮৪৬, ২২৩৩৮১১৮৮, ০২৪৭১১৯৯৮৮, ০২৯৬১৯৯৯৯। জাতীয় জরুরি সেবার নম্বর: ৯৯৯।