রাখাইনে ‘মানবিক করিডর’ স্থাপন: ভারত-চীনসহ আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অবনতির শঙ্কা

নিজেস্ব প্রতিবেদক

ছবি : সংগ্রহীত

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে একটি ‘মানবিক করিডর’ স্থাপনের বিষয়টি বাংলাদেশের জন্য ভূ-রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে। এই পদক্ষেপের ফলে ভারত ও চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের চরম অবনতি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা। একই সঙ্গে মিয়ানমারের জান্তা সরকারের সঙ্গেও বাংলাদেশের সম্পর্কের অবনতির সম্ভাবনা রয়েছে।

 

শনিবার (৩১ মে) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে সেন্টার ফর গভর্নেন্স অ্যান্ড সিকিউরিটি অ্যানালাইসিসের (সিজিএসএ) আয়োজিত ‘ভূ-রাজনৈতিক নিরাপত্তা ও মানবিক করিডর’ শীর্ষক এক গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা এসব কথা বলেন।

 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রুবায়েত ফেরদৌসের সঞ্চালনায় আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন যে, করিডর নিয়ে বর্তমান সরকারের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ নেই, কারণ এটি দুই সার্বভৌম রাষ্ট্রের মধ্যে চুক্তি অথবা নিরাপত্তা কাউন্সিলে পাস না হলে জাতিসংঘের ভূমিকা রাখার সুযোগ থাকে না। তিনি সরকারের অবস্থান পরিষ্কার না হওয়ার সমালোচনা করেন এবং করিডর ইস্যুকে নির্বাচন থেকে জনদৃষ্টি সরানোর একটি কৌশল হিসেবে উল্লেখ করেন।

 

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, করিডর স্থাপন করা হলে এর নিয়ন্ত্রণ কে করবে, তা স্পষ্ট নয় এবং এটি বাংলাদেশের নিরাপত্তার জন্য বড় ধরনের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। তিনি সংসদ থেকে এ ধরনের সিদ্ধান্ত আসার গুরুত্ব তুলে ধরেন এবং দ্রুত জাতীয় নির্বাচনের আহ্বান জানান।

 

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক করিডর দেওয়ার সিদ্ধান্তকে অন্তর্বর্তী সরকারের এজেন্ডার বাইরে বলে মন্তব্য করেন এবং এটি স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রশ্ন হওয়ায় এমন তৎপরতা বন্ধের আহ্বান জানান। তিনি সতর্ক করে বলেন যে, অনেক ক্ষেত্রেই মানবিক করিডর সামরিক করিডরে রূপান্তরিত হয়েছে।

 

বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সহকারী সাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন মানবিক করিডরের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষা হবে কিনা, তা ভেবে দেখার আহ্বান জানান এবং সরকারের ম্যান্ডেটের অভাবের কথা উল্লেখ করেন। সাবেক সংসদ সদস্য নিলোফার চৌধুরী মনি রাখাইন রাজ্যে অবশিষ্ট রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার কথা বললেও মানবিক করিডরকে অগ্রহণযোগ্য বলে মনে করেন।

 

এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন যে, জাতিসংঘ ও বিশ্বের পরাশক্তিগুলোর স্বার্থ থাকলেও বাংলাদেশের মূল স্বার্থ হলো রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো, নতুন করে রোহিঙ্গা গ্রহণ করা নয়। তিনি গোপনে নয়, সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা বলেন।

 

গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর অন্য দেশের করিডর বিষয়ক খারাপ অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে এই সরকারের এমন সিদ্ধান্তে যাওয়া উচিত ছিল না বলে মন্তব্য করেন। তিনি নির্বাচনকে এই সরকারের মূল কাজ হিসেবে উল্লেখ করেন। জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম সদস্য সচিব হুমায়রা নূরও করিডর দেওয়ার বিষয়ে আরও চিন্তাভাবনার প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন এবং এর সমর্থন করেন না বলে জানান।
গোলটেবিলে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিজিএসএ নির্বাহী পরিচালক কর্নেল (অব.) জগলুল আহসান।

 

তিনি বলেন যে, এটি বাংলাদেশের নিরাপত্তা ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি হবে এবং যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বের ভূরাজনৈতিক কূটকৌশলে ব্যবহৃত হয়ে বাংলাদেশের জন্য বড় নিরাপত্তা হুমকি তৈরি করতে পারে।

সম্পর্কিত খবর

এই পাতার আরও খবর

সর্বশেষ