আঠারোয় স্বপ্নপূরণ কোহলির, প্রীতির পাঞ্জাবকে কাঁদিয়ে বেঙ্গালুরুর শিরোপা।

বিডি কভারেজ

আইপিএল: দীর্ঘ ১৭ বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে অষ্টাদশ আসরে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) শিরোপা জিতল রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু (আরসিবি)।

আহমেদাবাদের ফাইনাল ম্যাচে পাঞ্জাব কিংসকে ৬ রানে হারিয়ে প্রথমবারের মতো আইপিএল মুকুট পরল বিরাট কোহলির দল। একই সঙ্গে, কোহলির নামের পাশেও যোগ হলো বহু আকাঙ্ক্ষিত আইপিএল শিরোপা।
জমজমাট ফাইনালের চিত্র:
মঙ্গলবার আহমেদাবাদে অনুষ্ঠিত ফাইনালে টস হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ১৯০ রান সংগ্রহ করে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু। জবাবে পাঞ্জাব কিংস নির্ধারিত ওভারে ১৮৪ রানে থামলে ৬ রানের শ্বাসরুদ্ধকর জয় পায় বেঙ্গালুরু। এর ফলে, কোহলির আরসিবির শিরোপাখরা কাটল, তবে প্রীতি জিন্তার পাঞ্জাব কিংসের ১৮ বছরের শিরোপাহীন থাকার অপেক্ষা আরও বাড়ল।
দীর্ঘদিন ধরে তারকাবহুল দল গড়েও সাফল্য না পাওয়ায় বেঙ্গালুরুর ভক্তদের মধ্যে হতাশা ছিল। এর আগে তিনবার ফাইনাল খেলে শিরোপার খুব কাছাকাছি গিয়েও স্বপ্নভঙ্গের অভিজ্ঞতা হয়েছিল তাদের। তবে এবার আর কোনো আক্ষেপের গল্প নয়; বরং কোহলির ক্যারিয়ারের সায়াহ্নে এসে এই শিরোপা জয় যেন এক পরম প্রাপ্তি।
ফাইনালে মহারণের আগে বেঙ্গালুরু অধিনায়ক রজত পাতিদার বারবার বলেছিলেন কোহলির জন্য শিরোপা জিততে চান তারা। মঙ্গলবারের ফাইনালে গোটা দল যেন সেই প্রতিজ্ঞা নিয়েই মাঠে নেমেছিল এবং সফলও হলো। আহমেদাবাদের মাঠ যেন রূপ নিয়েছিল এক টুকরো বেঙ্গালুরুতে; কোহলি কোহলি গর্জনে প্রকম্পিত হয়েছে পুরো স্টেডিয়াম। ম্যাচ শেষে আবেগ ধরে রাখতে পারেননি এই ভারতীয় তারকা, চোখের কোণে জমে থাকা পানিতে যেন আক্ষেপ মোছার তৃপ্তি মিশে একাকার হয়ে গিয়েছিল।
বেঙ্গালুরুর ইনিংস:

বড় স্কোরের প্রত্যাশা থাকলেও, টস হেরে বেঙ্গালুরু ব্যাটিংয়ে নামার পর উইকেট কিছুটা মন্থর মনে হচ্ছিল। দলীয় ১৮ রানে বিধ্বংসী ইংলিশ ওপেনার ফিল সল্টের উইকেট হারায় বেঙ্গালুরু। দ্বিতীয় উইকেটে মায়াঙ্ক আগারওয়ালের সঙ্গে ৩৮ রানের জুটি গড়েন কোহলি। ১৮ বলে ২৪ রান করে আগারওয়ালের বিদায়ে ভাঙে সেই জুটি। ৭ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে বেঙ্গালুরুর সংগ্রহ দাঁড়ায় ৬১ রান।
আসরজুড়ে দারুণ ফর্মে থাকা কোহলি এদিন কিছুটা ধীরগতিতে খেলেন। অন্য প্রান্তে উইকেটের পতন হতে থাকে একের পর এক। ১৬ বলে ২৬ রান করে দলীয় ৯৬ রানে আউট হন বেঙ্গালুরু অধিনায়ক রজত পাতিদার। ৩৫ বলে ৪৩ রান করে কোহলি ফেরেন আজমতউল্লাহ ওমরজাইয়ের শিকার হয়ে। কোহলির বিদায়ের পর ব্যাটিংয়ে এসে কিছুটা ঝড় তোলেন জিতেশ শর্মা। তাকে সঙ্গ দেন লিয়াম লিভিংস্টোন। পঞ্চম উইকেটে ১২ বলে ৩৬ রানের জুটি গড়েন তারা। ১৭তম ওভারের পঞ্চম বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ফেরেন লিভিংস্টোন। ১৫ বলে ২৫ রান করে কাইল জেমিসনের শিকার হন তিনি। ১০ বলে ২৪ রান করা জিতেশও ফেরেন পরের ওভারে।
শেষ ৩ ওভারে বেঙ্গালুরু মাত্র ২২ রান সংগ্রহ করতে পারে, যা সম্ভব হয়েছে শেফার্ডের ৯ বলে ১৭ রানের ইনিংসের কল্যাণে। ইনিংসের শেষ ওভারে আর্শদীপ সিং মাত্র ৩ রান দেন। পাঞ্জাবের হয়ে তিনটি করে উইকেট শিকার করেন আর্শদীপ সিং এবং কাইল জেমিসন।
পাঞ্জাবের ইনিংস:
১৯১ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ভালো শুরু করে পাঞ্জাব। ওপেনিং জুটিতে প্রবসিমরান সিং এবং প্রিয়ন্স আর্য মিলে ৪৩ রান যোগ করেন। ১৯ বলে ২৪ রান করে পঞ্চম ওভারের শেষ বলে জশ হ্যাজেলউডের শিকার হয়ে ফেরেন আর্য। পাওয়ারপ্লেতে ৫২ রান করে পাঞ্জাব। ২২ বলে ২৬ রান করে দলীয় ৭২ রানে ফেরেন প্রবসিমরান সিং। তবে পাঞ্জাব সবচেয়ে বড় ধাক্কাটা খায় অধিনায়ক শ্রেয়াস আইয়ারের উইকেট দ্রুত হারিয়ে। মাত্র ১ রান করে ইনিংসের দশম ওভারে সাজঘরে ফেরেন আইয়ার। ১০ ওভারে পাঞ্জাবের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৩ উইকেটে ৮১ রান।
দারুণ ফর্মে থাকা জশ ইংলিস শুরুটা ভালো করলেও ইনিংস বড় করতে পারেননি। ২৩ বলে ৩৯ রান করে দলকে বিপদের মুখে রেখে আউট হন তিনি। নেহাল ওয়াধেরা হাল ধরতেই পারেননি, উল্টো ১৮ বলে ১৫ রান করে দলকে আরও বিপদে ফেলেন। মার্কাস স্টয়নিস নিজের খেলা প্রথম বলেই ছক্কা মারেন। তখন জয়ের জন্য ২১ বলে ৪৯ দরকার পাঞ্জাবের, হাতে ৫ উইকেট। তবে ভুবনেশ্বর কুমারের পরের বলেই আউট হয়ে দলকে হারের দিকে ঠেলে দিয়ে যান এই অজি অলরাউন্ডার। শেষদিকে একাই চেষ্টা করেছেন শশাঙ্ক সিং। তবে ৩০ বলে ৬ ছক্কা ও ৩ চারে তার ৬১ রানের ইনিংস পাঞ্জাবের আক্ষেপই বাড়িয়েছে।
বেঙ্গালুরুর হয়ে ৪ ওভারে মাত্র ১৭ রান দিয়ে ম্যাচজয়ী বোলিং করেন ক্রুনাল পান্ডিয়া। ২টি উইকেট নেন ভুবনেশ্বর কুমার

সম্পর্কিত খবর

এই পাতার আরও খবর

সর্বশেষ