ধেয়ে আসছে ‘ভৌতিক ঘূর্ণিঝড়’?: আবহাওয়াবিদদের ব্যাখ্যা

নিজেস্ব প্রতিবেদক

ছবি : সংগ্রহীত

জুনের শেষ ভাগে যুক্তরাষ্ট্রের উপসাগরীয় উপকূলে একটি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানতে পারে—এমন একটি পূর্বাভাস সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে, যা অনেকের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। তবে আবহাওয়াবিদরা এটিকে ‘ঘোস্ট হারিকেন’ বা ‘ভৌতিক ঘূর্ণিঝড়’ আখ্যা দিচ্ছেন, যা সাধারণত বাস্তবে দেখা যায় না।

 

সিএনএন-এর খবরে বলা হয়েছে, প্রতিটি ঘূর্ণিঝড় মৌসুমের শুরুতেই এ ধরনের কিছু পূর্বাভাস দেখা যায়, যা দ্রুত ভাইরাল হয়ে পড়ে। অথচ বাস্তবে এর কোনো অস্তিত্ব থাকে না। এই ধরনের পূর্বাভাসকে ‘ঘোস্ট হারিকেন’ বা ‘ভৌতিক ঘূর্ণিঝড়’ বলা হয়।

 

এগুলো তৈরি হয় বিভিন্ন আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেলে, যা আবহাওয়াবিদদের আগাম তথ্য দিয়ে সাহায্য করে। তবে এই মডেলগুলো সবসময় নির্ভুল হয় না। এর মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত হলো যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ওসেনিক অ্যান্ড অ্যাটমোসফেরিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন পরিচালিত গ্লোবাল ফরকাস্ট সিস্টেম (জিএফএস)।

 

প্রশ্ন উঠছে, কেন এই মডেল বারবার ভুল তথ্য দেয়? জিএফএস মডেলের একটি সীমাবদ্ধতা হলো—এটি ৭ দিন বা তার বেশি সময়ের পূর্বাভাসে অনেক সময় অতিরঞ্জিত ফলাফল দেখায়। বিশেষ করে যখন সমুদ্রের ওপর ঝড়ো মেঘের আভাস থাকে, তখন মডেলটি খুব সহজেই ধরে নেয় সেখানে একটি ঘূর্ণিঝড় তৈরি হতে পারে।

 

সংশ্লিষ্টরা জানান, এই মডেলটি এমনভাবে তৈরি যে, এটি ছোট মেঘের গঠনকেও সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় ধরে ফেলে। ফলে অনেক সময় ভুল সংকেত দেয়।
যদিও ইউরোপিয়ান সেন্টার ফর মিডিয়াম রেঞ্জ ওয়েদার ফরকাস্ট (ইসিএমডব্লিউএফ), কানাডার সিএমসি কিংবা যুক্তরাজ্যের ইউকেএম মডেল তুলনামূলকভাবে বেশি নির্ভরযোগ্য, কারণ তারা ঝড়ের পূর্বাভাস দিতে একটু বেশি সতর্কতা অবলম্বন করে।

 

জিএফএস মডেল সবচেয়ে বেশি ভুল পূর্বাভাস দেয় ক্যারিবিয়ান সাগরের পশ্চিমাংশে। কারণ, ওই এলাকায় সেন্ট্রাল আমেরিকান গাইর (Central American Gyre) নামের একটি বড়, এলোমেলো বৃষ্টিপাত ও ঝড়ো মেঘের গঠন থাকে। এটি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির জন্য আদর্শ পরিবেশ তৈরি করে। তাই মডেলটি দ্রুত ধরে নেয় সেখানে ঝড় তৈরি হবে।

 

এত ভুল করার পরও জিএফএস মডেল একেবারেই ফেলনা নয়। বরং এটি প্রকৃত ঝড়ের আগাম আভাস দিতে অনেক সময় বেশ কার্যকর। আবহাওয়াবিদদের মতে, মডেলের দুর্বলতা জেনেই তারা সেটিকে ভালোভাবে বিশ্লেষণ করেন। তাই মডেলের এই অতিসংবেদনশীলতা অনেক সময় আগেই ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা শনাক্ত করতে সাহায্য করে।

 

বিজ্ঞানীরা অবশ্য দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে নির্ভুলতা আনতে এখন নির্ভর করছেন ‘এনসেম্বল ফরকাস্টিং’-এর ওপর। যেখানে একাধিক সম্ভাব্য ফলাফলের একটি সেট তৈরি করা হয়। এতে বোঝা যায় কোন পূর্বাভাসটি সম্ভাব্য, আর কোনটি ব্যতিক্রম।

 

জিএফএস-এর মতো মডেল একবারে একটি ফলাফল দেয়, কিন্তু এনসেম্বল মডেল বিভিন্ন সম্ভাবনার ছক তৈরি করে। ফলে আবহাওয়াবিদরা আরও ব্যাপক বিশ্লেষণ করতে পারেন।

 

তাই, একটি মডেলের পূর্বাভাস দেখে আতঙ্কিত হওয়া উচিত নয়। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া এসব গুজব অনেক সময় বাস্তব পরিস্থিতির সঙ্গে মিল থাকে না। ন্যাশনাল হ্যারিকেন সেন্টারের মতো প্রতিষ্ঠানে আবহাওয়াবিদরা একাধিক মডেল, বাস্তব পর্যবেক্ষণ ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে পূর্বাভাস দেন।

সোর্স: সিএনএন

সম্পর্কিত খবর

এই পাতার আরও খবর

সর্বশেষ