ছবি : সংগ্রহীত
২০২৫ সালের ক্লাব বিশ্বকাপকে ঘিরে ইউরোপ থেকে সৌদি আরব পর্যন্ত সব ফুটবল ক্লাবজুড়ে ব্যাপক তোড়জোড় শুরু হয়েছে। এই টুর্নামেন্টের পুরস্কার মূল্য ১ বিলিয়ন ডলার, যা বিজয়ী দলের প্রাপ্ত অর্থ প্রিমিয়ার লিগের বেশ কয়েকটি ক্লাবের এক মৌসুমের বাজেটের চেয়েও বেশি। এমনটাই জানাচ্ছে 'ফুটমব' নামের একটি সূত্রের খবর।
বিপুল অর্থের হাতছানি ও ক্লাবগুলোর প্রস্তুতি
এই বিপুল অর্থের লোভে ক্লাবগুলো এখন এই প্রতিযোগিতায় জায়গা করে নিতে হুমড়ি খেয়ে পড়ছে। রিয়াল মাদ্রিদ ইতিমধ্যে ১০ মিলিয়ন পাউন্ড খরচ করে লিভারপুল থেকে ট্রেন্ট আলেক্সান্ডার-আর্নল্ডকে এক মাস আগেই দলে ভিড়িয়েছে, যেন তাকে জুনেই ক্লাব বিশ্বকাপে মাঠে নামানো যায়। রিয়াল মাদ্রিদের এই আগ্রাসী সিদ্ধান্ত শুধু ট্রেন্টেই সীমাবদ্ধ নেই। ক্লাবটি নতুন কোচ হিসেবে সাবেক খেলোয়াড় এবং লিভারকুজেনের সফল কোচ জাবি আলোনসোকে নিয়ে এসেছে।
সাধারণত নতুন কোচকে মৌসুম শুরুর আগে পুরো প্রস্তুতির সুযোগ দেওয়া হলেও, জাবি আলোনসোর সামনে অল্প সময়ে দল গুছিয়ে কঠিন প্রতিযোগিতায় নামার চ্যালেঞ্জ।
চেলসিও পিছিয়ে নেই। তারা ইংল্যান্ড অনূর্ধ্ব-২১ দলের ফরোয়ার্ড লিয়াম ডেলাপকে দলে ভেড়ানোর কাজ শেষ করেছে। সাধারণত এমন খেলোয়াড়দের ধীরে ধীরে দলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়, কিন্তু এবার ক্লাব বিশ্বকাপের জন্য তাকে সরাসরি প্রতিযোগিতার চাপের মুখে পড়তে হচ্ছে।
শুধু ইউরোপ নয়, মধ্যপ্রাচ্য থেকেও দলগুলো আগাম প্রস্তুতিতে ব্যস্ত। আল-হিলাল ব্রুনো ফার্নান্দেজকে দলে টানতে চাইছে। তারা ইন্টার মিলান ছেড়ে আসা কোচ সিমোনে ইনজাঘিকে দলে ভিড়িয়েছে। অন্যদিকে আল-নাসরের ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে রহস্যময় পোস্ট দিচ্ছেন। ফিফা সভাপতি ইনফান্তিনোও ইঙ্গিত দিয়েছেন যে রোনালদোকে নিয়ে আলোচনায় রয়েছে তারা।
এই টুর্নামেন্ট কতটা অর্থকেন্দ্রিক, তা যুক্তরাষ্ট্রের তিনটি ক্লাব ইন্টার মায়ামি, লস অ্যাঞ্জেলেস এফসি ও সিয়াটল সাউন্ডার্সের পুরস্কারের দিক থেকে বোঝা যায়। তারা শুধুমাত্র অংশগ্রহণ করলেই প্রায় ১০ মিলিয়ন ডলার পাবে, যা মেজর লিগ সকার থেকে পুরো মৌসুমে পাওয়া অর্থের চেয়ে বেশি। এতে করে লিগের ন্যায়বিচার নীতিই প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।
ইংলিশ ক্লাবগুলোর ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। চেলসি কিংবা ম্যানচেস্টার সিটি যদি এই টুর্নামেন্ট জিতে যায়, তাহলে তারা প্রতিদ্বন্দ্বী ক্লাবগুলোর চেয়ে আর্থিকভাবে অনেক এগিয়ে যাবে। অথচ একই সময়ে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে প্রফিট অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি রুলস (PSR)-এর কারণে অন্যান্য ক্লাবের খরচ সীমাবদ্ধ করা হচ্ছে। টুর্নামেন্টের কাঠামো বিতর্কিত হলেও আকর্ষণীয়। ছয়টি মহাদেশের ক্লাবগুলোর অংশগ্রহণ প্রশংসনীয় হলেও, এর সময়সূচি, কাঠামো এবং অর্থনৈতিক দিক অনেকটাই অসুস্থ প্রতিযোগিতার জন্ম দিচ্ছে।
তবুও ১৪ জুন (বাংলাদেশে ১৫ জুন ভোরে) শুরু হতে যাওয়া এই টুর্নামেন্ট ফুটবলপ্রেমীদের জন্য আকর্ষণীয় হতে পারে। নতুন কোচ আলোনসোর রিয়াল মাদ্রিদ কেমন হয়, সেটি আগেভাগেই দেখা যাবে। অনেক খেলোয়াড়ও তাদের নতুন ক্লাবে আত্মপ্রকাশ করবেন বিশ্বদরবারে।