ছবি : সংগ্রহীত
২০২৬ সালের এশিয়ান কাপ বাছাই পর্বের ম্যাচে আজ ঢাকায় সিঙ্গাপুরের মুখোমুখি হচ্ছে বাংলাদেশ। দুই দলের জন্যই ম্যাচটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ গ্রুপ ‘সি’-তে এখন পর্যন্ত উভয় দলের সংগ্রহ সমান ১ পয়েন্ট করে। এই ম্যাচে জয় পেলে যেকোনো একটি দল পয়েন্ট টেবিলে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি নিশ্চিত করতে পারবে। বিশেষ করে ঘরের মাঠে খেলতে নামা বাংলাদেশের জন্য এটি একটি বড় সুযোগ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। আজ (মঙ্গলবার) জাতীয় ফুটবল স্টেডিয়ামে খেলা শুরু হবে সন্ধ্যা ৭টায়।
আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশ ও সিঙ্গাপুর এখন পর্যন্ত মাত্র দুইবার মুখোমুখি হয়েছে, এবং উভয় ম্যাচেই সিঙ্গাপুর জয় লাভ করেছে। যদিও বাংলাদেশ এখনো জয়হীন, সাম্প্রতিক ফর্ম বিবেচনায় বাংলাদেশ তুলনামূলক ভালো করছে; শেষ পাঁচটি ম্যাচের মধ্যে দুটি জয়, একটি ড্র এবং দুটি হার রয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, ঢাকার নিজস্ব মাঠে খেলার কারণে বাংলাদেশ মানসিকভাবে কিছুটা এগিয়ে থাকবে। তবে সিঙ্গাপুরের অভিজ্ঞতা এবং দ্রুতগতির খেলা বাংলাদেশের রক্ষণভাগের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে। সেই সঙ্গে, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ ফুটবল দলের স্কোরারদের ব্যর্থতাও বেশ দৃশ্যমান।
বাংলাদেশ দলের অন্যতম শক্তি হচ্ছে মাঝমাঠের কিছু অভিজ্ঞ এবং ফর্মে থাকা খেলোয়াড়। অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া ছাড়াও সামিত সোম ও হামজা চৌধুরী মাঝমাঠে ভালো কর্তৃত্ব বজায় রাখবেন বলে আশা করা হচ্ছে। আরেকটি বড় সুবিধা হলো ঘরের মাঠে খেলা। ঢাকার গরম আবহাওয়া এবং গ্যালারি ভর্তি সমর্থকদের উপস্থিতি প্রতিপক্ষের জন্য চাপ তৈরি করতে পারে। বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ার বাইরের দলগুলো এই পরিবেশে মানিয়ে নিতে হিমশিম খায়, যা বাংলাদেশের জন্য কৌশলগত সুবিধা এনে দিতে পারে।
তবে, বাংলাদেশ দলের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হলো একজন ধারাবাহিক গোলদাতার অভাব। অনেক সময় ভালো বোঝাপড়া থাকলেও গোল করার সময় সঠিক সিদ্ধান্ত বা নিখুঁত ফিনিশিংয়ের ঘাটতি দেখা যায়। দলে একজন প্রকৃত 'নাম্বার ৯' স্ট্রাইকারের অভাব দীর্ঘদিন ধরেই স্পষ্ট, যা ম্যাচের ফলাফল নির্ধারণে প্রভাব ফেলছে। রক্ষণভাগেও অনিয়মিত খেলা ও ভুল পজিশনের কারণে প্রতিপক্ষ সহজে সুযোগ তৈরি করতে পারে। বিশেষ করে সেন্টার ব্যাকদের মাঝে সমন্বয়ের ঘাটতি এবং সেট-পিস ডিফেন্ড করার সময় বিভ্রান্তি লক্ষ্য করা যায়। বাংলাদেশ ফুটবল দল এখন এক রকম পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, যেখানে পুরোনো অভিজ্ঞ খেলোয়াড়দের সঙ্গে তরুণদের মিশেল ঘটছে।
বাংলাদেশের ফিফা র্যাংকিং ১৮৩তম হলেও সিঙ্গাপুরের ফিফা র্যাংকিং ১৬১। তবে দলটি গত ছয় ম্যাচে চারটিতেই হেরেছে। সাম্প্রতিক সময়ে মালদ্বীপের বিপক্ষে ৩-১ গোলের জয়ে কিছুটা নির্ভার থাকবে সিঙ্গাপুরের কোচ সুতোমু ওগুরা। এই দলের মূল শক্তির জায়গা আক্রমণভাগের তারকা ইখসান ফান্দি, যিনি আন্তর্জাতিক ফুটবলে ৩৯ ম্যাচে ২০ গোলের মালিক এবং ২৬ বছর বয়সী এই খেলোয়াড় চোট কাটিয়ে ফিরেই মালদ্বীপের বিপক্ষে ম্যাচে ২ গোল দিয়েছেন। তবে মালদ্বীপের বিপক্ষে এই জয় নিয়ে সিঙ্গাপুরের খুব বেশি আশাবাদী হওয়ার সুযোগ নেই, কারণ মালদ্বীপে গত ২ বছর যাবত ঘরোয়া ফুটবল বন্ধ।
ইখসান ফান্দি ছাড়াও সিঙ্গাপুরের দুইজন অভিজ্ঞ ম্যাচ উইনার আছেন: ১৪০ ম্যাচ খেলা অধিনায়ক হারিস হারুন ও ১২২ ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা নিয়ে সাফুয়ান বাহারুদিন। সিঙ্গাপুরের খেলোয়াড়দের উচ্চতা বাংলাদেশের রক্ষণভাগের জন্য দুশ্চিন্তার কারণ হতে পারে।
বাংলাদেশে বাড়তি উচ্ছ্বাস ও টিকিট নিয়ে আগ্রহ
কানাডা থেকে আসা সামিত সোম ও ইংল্যান্ড থেকে বাংলাদেশের ফুটবলের সবচেয়ে বড় তারকা বনে যাওয়া হামজা চৌধুরীকে ঘিরে বাংলাদেশ কোচ হাভিয়ের কাবরেরা পরিকল্পনা করছেন। সিঙ্গাপুরের বিরুদ্ধে এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের এই ম্যাচকে ঘিরে বাংলাদেশের ফুটবল সমর্থকদের মধ্যে নতুন করে আশার সঞ্চার হয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জাতীয় দলের পারফরম্যান্স খুব একটা চোখে পড়ার মতো না হলেও, কিছু বিষয় এই ম্যাচের আগে বাংলাদেশের সমর্থকদের আশাবাদী করে তুলেছে। বিশেষ করে বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ফুটবলার নিয়ে আসা এবং ভুটানের বিপক্ষে জয়, যা আট বছর আগে হেরে গিয়ে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ফুটবল অঙ্গন থেকে প্রায় হারিয়ে গিয়েছিল। সেই ভুটানের বিপক্ষে জয়ের পরেই বাংলাদেশ ফুটবলে কিছুটা জৌলুস ফিরে পেয়েছে।
বাংলাদেশ বনাম সিঙ্গাপুর ম্যাচকে কেন্দ্র করে ফুটবলপ্রেমীদের মধ্যে টিকিট নিয়ে ব্যাপক আগ্রহ দেখা গিয়েছিল। অনলাইনে টিকিট বিক্রির দায়িত্ব পাওয়া প্ল্যাটফর্ম প্রথম দিনেই দর্শকদের চাপ সামলাতে হিমশিম খায়। সাইটে হঠাৎ প্রচণ্ড ভিজিটরের চাপ এবং একটি সাইবার হামলার কারণে প্রাথমিকভাবে টিকিট বিক্রি বন্ধ রাখতে হয়। পরে নতুন সময় অনুযায়ী হাজার হাজার সমর্থক একযোগে প্রবেশ করে টিকিট সংগ্রহের চেষ্টা করেন। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন