ছবি : সংগ্রহীত
রবিবার রাত। লস অ্যাঞ্জেলসের আকাশে ধোঁয়া আর আগুনের লেলিহান শিখা। রাস্তায় রাস্তায় ভাঙচুর, জ্বলছে গাড়ি, দোকান, সরকারি ভবন। পুলিশের গাড়িবহরের উপর ছোড়া হচ্ছে পাথর, মলোটভ ককটেল। মাঝে মাঝে গুলির শব্দে কেঁপে উঠছে পুরো শহর। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নির্দেশে মোতায়েন হয়েছে ন্যাশনাল গার্ড, সঙ্গে আছে "শুট টু কিল" এর অনুমতি। কিন্তু তাতেও থামছে না এই অগ্নিঝরা পরিস্থিতি।
শুক্রবার সকাল। লস অ্যাঞ্জেলসের হিসপ্যানিক অধ্যুষিত এলাকায় অভিযান চালায় পুলিশ। অভিবাসীদের বাড়িতে তল্লাশি, গ্রেফতার, আর বৈধ-অবৈধ সবার জন্য ৭২ ঘন্টার মধ্যে থানায় রিপোর্ট করার নির্দেশ। কিন্তু এবারের অভিযান আগের মতো সাধারণ ঘটনা হয়ে থাকেনি। গুজব ছড়িয়ে পড়ে—এবার শুধু অবৈধ নয়, বৈধ অভিবাসীদেরও তাড়ানো হবে। হিসপ্যানিক কমিউনিটিতে ক্ষোভ দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে।
রাত নেমে এলেই রাস্তায় নামে হাজার হাজার মানুষ। শুরু হয় বিক্ষোভ, তারপর পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ। পুলিশের গাড়িতে আগুন, সরকারি অফিসে ভাঙচুর। পরিস্থিতি এমন দাঁড়ালো যে, শহরের মেয়র পর্যন্ত বলতে বাধ্য হন, "লস অ্যাঞ্জেলস এমন বিভীষিকা আগে কখনও দেখেনি।"
প্রথমদিকে বিষয়টা ছিল পুলিশ ও অভিবাসীদের মধ্যে। কিন্তু এখন তা রূপ নিয়েছে এক জটিল সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষে। শহরের আদি বাসিন্দা, বিশেষ করে কিছু হোয়াইট আমেরিকান, পুলিশের পাশে দাঁড়িয়ে অভিবাসী বিরোধী মিছিলে যোগ দিচ্ছেন। অন্যদিকে, লাতিনো, এশিয়ান ও আফ্রিকান কমিউনিটির লোকজন একত্রিত হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলছেন। রাস্তায় রাস্তায় চলছে পাল্টা হামলা, বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায় ট্রাম্প ন্যাশনাল গার্ড পাঠানোর নির্দেশ দেন। ২০২১-এর ক্যাপিটল দাঙ্গার পর এটাই প্রথমবার যখন ন্যাশনাল গার্ডকে রাস্তায় নামতে হলো। কিন্তু বিক্ষোভকারীদের দাবি, ন্যাশনাল গার্ড নির্বিচারে গুলি চালাচ্ছে। ফলে বিক্ষোভ আরও তীব্র হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হচ্ছে আহতদের ভিডিও, পুলিশি brutality-এর ছবি।
লস অ্যাঞ্জেলস, যা "সিটি অব অ্যাঞ্জেলস" নামে পরিচিত, আজ রক্ত, আগুন আর ধ্বংসস্তূপের শহরে পরিণত হয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, ট্রাম্পের অভিবাসন-বিরোধী নীতি কি এই বিভাজনকে আরও গভীর করবে? নাকি এই অগ্নিপরীক্ষা থেকে কোনো সমাধান বেরিয়ে আসবে?
একটা বিষয় পরিষ্কার—লস অ্যাঞ্জেলসের এই যুদ্ধ শুধু পুলিশ বা অভিবাসীদের নয়, এ এখন আমেরিকার সমাজের গভীর ফাটলেরই প্রতিচ্ছবি।