
ছবি : সংগ্রহীত
ইরানের গোপন ফরদো পারমাণবিক স্থাপনা ধ্বংস করতে বিশেষ ধরনের অত্যাধুনিক ভারী বোমার প্রয়োজন, যা বর্তমানে শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্রের হাতেই রয়েছে। পাহাড়ের নিচে প্রায় ৯০ মিটার গভীরে অবস্থিত এই স্থাপনাটি ধ্বংস করতে GBU-57A/B নামের একটি সুপার-হেভি বাঙ্কার বাস্টার বোমাই কার্যকর হতে পারে—যার মালিকানা ও ব্যবহারের সক্ষমতা একমাত্র আমেরিকার।
GBU-57A/B, যাকে “ম্যাসিভ অর্ডন্যান্স পেনিট্রেটর” (MOP) নামেও ডাকা হয়, এটি একটি ১৫ টন ওজনের অত্যাধুনিক বাঙ্কার বিধ্বংসী বোমা। এটি মাটির গভীরে প্রবেশ করে ভেতরে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে শক্তিশালী কংক্রিট ও পাথুরে কাঠামো ধ্বংস করতে সক্ষম। প্রতিটি বোমার নির্মাণ খরচ প্রায় ৫০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি।
এই বিশাল ওজনের বোমা শুধুমাত্র মার্কিন বিমানবাহিনীর B-2 স্পিরিট স্টিলথ বোমারু বিমান দ্বারাই বহন ও নিক্ষেপ করা সম্ভব। ইসরাইলসহ অন্য কোনো মিত্র রাষ্ট্রের কাছে এই বিমান নেই, ফলে এই অপারেশন করতে গেলে সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রেরই সম্পৃক্ততা প্রয়োজন।
ওয়েস্ট পয়েন্টের সেনা বিশ্লেষক জন স্পেন্সার বলেছেন, “এই বোমা এবং এটি ব্যবহারের সক্ষমতা সম্পূর্ণভাবে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে। অর্থাৎ, ফরদো স্থাপনা ধ্বংস করতে হলে তা আমেরিকাকেই করতে হবে।”
ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, মার্কিন বিমানবাহিনী ২০১৩ সাল নাগাদ এই বোমার ২০টি ইউনিট সংগ্রহ করেছে, কিন্তু এখনো পর্যন্ত ইসরাইল বা অন্য কোনো মিত্র দেশকে এটি হস্তান্তর করেনি।
ফরদো পারমাণবিক স্থাপনা ইরানের অন্যতম সুরক্ষিত ও গোপন স্থাপনা, যা পাহাড়ের অভ্যন্তরে গভীরে অবস্থিত। সাধারণ বোমা বা মিসাইল দিয়ে এটি ধ্বংস করা প্রায় অসম্ভব। GBU-57A/B-এর মতো অস্ত্রই কেবল এত গভীরে আঘাত হানতে পারে। যা ইসরায়েলের কাছে নেই এবং বহনের জন্য প্রয়োজনীয় বিমানও নেই।
যদি যুক্তরাষ্ট্র বা ইসরাইল এই স্থাপনায় হামলা করে, তাহলে ইরানের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া আসতে পারে, যা পুরো মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলে উত্তেজনা বাড়িয়ে দিতে পারে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই ধরনের কোনো অপারেশন ঘটলে তা সরাসরি যুক্তরাষ্ট্র-ইরান সংঘাতের দিকে নিয়ে যেতে পারে।
ফরদো পারমাণবিক স্থাপনা ধ্বংসের সক্ষমতা বর্তমানে শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্রের হাতে থাকায়, ভবিষ্যতে এই ইস্যুটি কীভাবে বিকশিত হয়, তা নিয়ে গোটা বিশ্বের নজর থাকবে। আবারও কি বিশ্বযুদ্ধের সম্মুখীন হতে যাচ্ছে গোটা বিশ্ব? তা কেবল সময়ই বলে দিতে পারে।