ছবি : সংগ্রহীত

ইরান শুধু তার শক্তিশালী সামরিক বাহিনী দিয়েই নয়, প্রকৃতি-প্রদত্ত দুর্গম ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য দিয়েও রক্ষা পায়। এই দেশে আগ্রাসন চালানো মানেই শুধু ইরানি সেনাদের নয়, প্রকৃতির রুদ্র রোষেরও মোকাবেলা করা। ইরানের ভূ-প্রাকৃতিক বাধাগুলো এতটাই ভয়ঙ্কর যে, শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে বহিঃশক্তি এখানে সহজে প্রবেশ করতে পারেনি। আসুন জেনে নিই, কীভাবে ইরান প্রকৃতির সাহায্যে নিজেকে অজেয় করে রেখেছে।

জাগরোস পর্বতমালা ইরানের পশ্চিম সীমান্তজুড়ে এক দুর্ভেদ্য প্রাচীরের মতো দাঁড়িয়ে আছে। এর খাড়া ও সংকীর্ণ পথগুলো শত্রু সেনাদের জন্য মৃত্যুফাঁদ। ইতিহাস বলে, অ্যাসিরীয়, রোমান এমনকি আধুনিক সময়ের সেনাবাহিনীও এই পর্বতমালা অতিক্রম করতে গিয়ে বিপর্যস্ত হয়েছে।

অপরদিকে , উত্তরে কাস্পিয়ান সাগর সংলগ্ন এলবুর্জ পর্বতমালা ইরানের উত্তরাঞ্চলকে রক্ষা করে। মাউন্ট দামাভান্দের মতো সুউচ্চ শৃঙ্গগুলো শীতকালে তুষারাবৃত থাকে, যা উত্তর দিক থেকে আসা যেকোনো আক্রমণকে অসম্ভব করে তোলে।

আফগানিস্তান ও পাকিস্তান সীমান্তে বিস্তৃত পর্বতশ্রেণিগুলো ইরানের পূর্ব দিককে সুরক্ষিত রেখেছে। এখানে কোনো সহজ প্রবেশপথ নেই—শুধুই উঁচু পাহাড়, গভীর গিরিখাত ও অনুর্বর ভূমি।

ইরানের কেন্দ্রভাগে অবস্থিত এই মরুভূমিগুলো পৃথিবীর অন্যতম বৈরী পরিবেশের সৃষ্টি করেছে। ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রা, লবণাক্ত মাটি, চলমান বালিয়াড়ি এবং পানির অস্তিত্বহীনতা—এখানে টিকে থাকাই এক অসম্ভব চ্যালেঞ্জ। কোনো আগ্রাসনকারী সেনাবাহিনীর পক্ষে এই মরুভূমি পেরিয়ে অগ্রসর হওয়া প্রায় অকল্পনীয়।

ইরান কেবল প্রকৃতির ওপর নির্ভর করে না, বরং এই ভৌগোলিক সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে শত্রুর বিরুদ্ধে চমৎকার কৌশল তৈরি করেছে। তারা পর্বতের সংকীর্ণ পথগুলোতে সামরিক ঘাঁটি স্থাপন করে এবং মরুভূমির মধ্যেও গোপন অবস্থান তৈরি করে রেখেছে। ফলে, শত্রুপক্ষ যদি কোনোভাবে ভূ-প্রাকৃতিক বাধা অতিক্রমও করে, তবুও ইরানি সেনাদের হামলার মুখোমুখি হতে হবে।

ইতিহাসে বারবার প্রমাণ হয়েছে, ইরান দখল করা কতটা কঠিন। মঙ্গোলরা ইরান জয় করলেও তাদের বিশাল সেনাবাহিনীকে প্রকৃতির কাছে নতি স্বীকার করতে হয়েছিল। আধুনিক যুগেও ইরাক-ইরান যুদ্ধে (১৯৮০-৮৮) সাদ্দাম হোসেনের সেনাবাহিনী ইরানের ভূ-প্রাকৃতিক প্রতিবন্ধকতার কারণে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়।

সর্বশেষে বলতে হয়, ইরান প্রকৃতির সেরা রক্ষাকবচ পেয়েছে—একটি দেশ যেখানে ভূগোলই হয়ে উঠেছে তার সবচেয়ে বড় অস্ত্র। তাই ইরান দখল করা? স্বপ্ন দেখা যতটা সহজ, বেঁচে ফেরা ততটাই কঠিন । ইরান শুধু একটি দেশ নয়, এটি এক অজেয় দুর্গ—যেখানে প্রকৃতি ও মানুষের প্রতিরোধ শক্তি এক হয়ে শত্রুকে পরাজয়ের দিকে ঠেলে দেয়।