ছবি : সংগ্রহীত
ফেনীতে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের পরশুরাম উপজেলা প্রতিনিধি নাহিদ রাব্বির বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য বিভাগের চাকরি দেওয়ার কথা বলে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগ উঠেছে। বুধবার (১৮ জুন) রাতে চাঁদা দাবির একটি কথোপকথন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে জেলাজুড়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়।
অভিযুক্ত নাহিদ রাব্বি পরশুরাম পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের কোলাপাড়া গ্রামের নূর নবীর ছেলে। অভিযোগ উঠেছে, শুক্রবার (২০ জুন) ফেনী জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের এক নিয়োগ পরীক্ষায় চাকরি দেওয়ার কথা বলে হৃদয় নামে এক ব্যক্তির কাছে তিনি ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন।
ছড়িয়ে পড়া ২ মিনিট ৩৮ সেকেন্ডের কল রেকর্ডে নাহিদকে বলতে শোনা যায়, লিখিত পরীক্ষার আগে বৃহস্পতিবারের (১৯ জুন) মধ্যে ৪ লাখ টাকা অগ্রিম দিতে হবে এবং বাকি টাকা পরীক্ষার পরে পরিশোধ করতে হবে। এ সময় হৃদয় নামের অপর পাশের ওই ব্যক্তি ১-২ লাখ টাকা কম দিতে চাইলে নাহিদ সাফ জানিয়ে দেন, "১০ লাখ টাকা থেকে এক পয়সাও কম হবে না।"
যখন হৃদয় চাকরি পাওয়ার পর টাকা পরিশোধ করবেন বললে নাহিদ রাব্বি বলেন, "প্রথমে একটা অ্যামাউন্ট না দিলে তো সে উল্টে যাবে। স্ট্যাম্প করা হবে, তোরে স্ট্যাম্প দিয়ে দিবে। আমার হাতে থাকবে সব, আমার মাধ্যমেই কাজ করবে।" এই সময় চাকরিপ্রত্যাশী বলেন, "ভাই আপনি ওই ভাবে করে দেন, উল্টাবে না।" তখন নাহিদ রাব্বি বলেন, "সেই ভালোবাসা বাংলাদেশে নাই।"
নাহিদ রাব্বিকে গেল বছরের ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে পরশুরাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফুর রহমানের সঙ্গে উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভাসহ সরকারি বিভিন্ন কর্মসূচিতেও অতিথির আসনে দেখা গেছে। এছাড়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গেও বিভিন্ন কর্মসূচিতে তার উপস্থিতি ছিল।
অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের পরশুরাম উপজেলা প্রতিনিধি নাহিদ রাব্বিকে একাধিকবার কল করা হলেও তার ব্যবহৃত নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।
এ ব্যাপারে জেলা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সংগঠক আবদুল্লাহ আল জুবায়ের ঢাকা পোস্টকে বলেন, অভিযুক্ত নাহিদ তাদের সঙ্গে কাজ করলেও কাগজে-কলমে সংগঠনের কেউ নন। সেজন্য তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে তাকে এখন থেকে সবধরনের কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ থেকে বিরত রাখা হবে।
ফেনীর সিভিল সার্জন ডা. মো. রুবাইয়াত বিন করিম বলেন, অনেক বছর পর এই নিয়োগ পরীক্ষা হচ্ছে। এখানে ১১৫টি পদে ১২ হাজার ৪৪৮ জন চাকরিপ্রার্থী পরীক্ষায় অংশ নেবেন। ইতোমধ্যে ছড়িয়ে পড়া কল রেকর্ডের বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অবহিত করা হয়েছে। তিনি বলেন, স্বচ্ছতার সঙ্গে পরীক্ষা শেষ করতে স্বাস্থ্য বিভাগ বদ্ধপরিকর এবং কোনো ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতির সুযোগ নেই।
ফেনীর পুলিশ সুপার মো. হাবিবুর রহমান বলেন, স্বাস্থ্য বিভাগে নিয়োগের বিষয়ে একটি কথোপকথনের কল রেকর্ড ফাঁসের ঘটনা নজরে এসেছে। বিষয়টি পুলিশ তদন্ত করছে এবং এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।