
ছবি : সংগ্রহীত
তুরস্কের এক সাংবাদিক বাংলাদেশ সম্পর্কে ভিত্তিহীন ও বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। উজায় বুলুত নামের এই সাংবাদিক বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে একাধিক প্রবন্ধে বিতর্কিত দাবি করেছেন। শুক্রবার (২০ জুন) প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এক বিবৃতিতে এসব অভিযোগ খণ্ডন করে বলেছে, তার লেখাগুলো বাংলাদেশের বাস্তবতাকে বিকৃত করার জন্য প্রোপাগান্ডামূলক প্রচারণা।
উজায় বুলুত ইউরোপ ও আমেরিকাভিত্তিক কয়েকটি মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে বাংলাদেশ নিয়ে ধারাবাহিকভাবে প্রবন্ধ লিখেছেন। তার মতেবাংলাদেশের ২০২৪ সালের গণ-আন্দোলন প্রকৃতপক্ষে ইসলামী চরমপন্থীদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ছিল।যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্বে বসানো হয়েছিল। সংখ্যালঘু ও প্রগতিশীলদের বিরুদ্ধে ব্যাপক হামলা হয়েছে, যা ইসলামী উগ্রবাদের বিস্তার প্রমাণ করে। হিন্দু নেতা ভবেশ চন্দ্র রায়ের মৃত্যুকে তিনি সাম্প্রদায়িক হামলার উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
তিনি তার দাবির সপক্ষে বিএইচবিসিইউসি (Bangladesh Hindu Buddhist Christian Unity Council) এবং আরআরএজি (Radical Religion Alert Group) নামের বিতর্কিত সংস্থাগুলোর বক্তব্য উদ্ধৃত করেছেন।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং বলছে, উজায় বুলুতের দাবিগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তাদের বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে—
২০২৪-এর আন্দোলন ছিল গণতান্ত্রিক: এটি শেখ হাসিনার শাসনামলের বিরুদ্ধে ছাত্র, শিক্ষক, সাংস্কৃতিক কর্মী ও সাধারণ মানুষের ব্যাপক অংশগ্রহণে সংঘটিত হয়। ইসলামী চরমপন্থীদের হাইজ্যাক করার বা যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপের কোনো প্রমাণ নেই।
অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বে রাষ্ট্রীয় সমর্থন: ইউনূসকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে নিযুক্ত করা হয় আন্দোলনকারী নেতৃবৃন্দ ও প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সম্মতিতে, কোনো বিদেশী শক্তির হস্তক্ষেপে নয়।
ভবেশ চন্দ্র রায়ের মৃত্যু নিয়ে তিনি বলেন, এটি কোনো সাম্প্রদায়িক হামলা নয়। ডেইলি স্টার প্রথমে ভুল সংবাদ প্রকাশ করলেও পরে স্বীকার করে যে তার মৃত্যু স্বাস্থ্যজনিত ও আর্থিক চাপের কারণে ঘটেছে। ময়নাতদন্তেও হত্যার কোনো প্রমাণ মেলেনি। যদিও তার স্ত্রী মৃত্যুকে ‘অস্বাভাবিক’ বলে মনে করেন, তবে পরিবারের কেউই হামলার অভিযোগ করেননি।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল ভবেশ চন্দ্রের মৃত্যুকে ‘পদ্ধতিগত নিপীড়নের প্রমাণ’ বলে মন্তব্য করেছিলেন। তবে প্রেস উইং তা প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, বাংলাদেশের সরকার সব নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
প্রেস উইং বলছে, উজায় বুলুতের লেখাগুলো বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে চায়। তার প্রবন্ধগুলো ‘The Talibanization of Bangladesh’শিরোনামে ‘The European Conservative, The Front Page এবং Gatestone Institute-এ প্রকাশিত হয়েছে, যা আন্তর্জাতিক মহলে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।
বিবৃতিতে স্পষ্ট করা হয়েছে, বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। সরকার সকল নাগরিকের অধিকার রক্ষায় কাজ করছে এবং কোনো গোষ্ঠীকে উৎসাহিত করা হয়নি। উজায় বুলুতের মতো সাংবাদিকদের অপপ্রচার বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা বলে মনে করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ সরকার আন্তর্জাতিক মহলকে উদ্দেশ্য প্রণোদিত ও অপরীক্ষিত সংবাদের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে অনুরোধ করেছে। প্রেস উইং বলছে, বাংলাদেশের বাস্তবতা বুঝতে হলে স্থানীয় ও স্বাধীন সূত্রের তথ্য যাচাই করা উচিত।