ছবি : সংগ্রহীত
আসন্ন বাংলাদেশ ফুটবল মৌসুমে সার্ক অঞ্চলের (ভারত, পাকিস্তান, ভুটান, নেপাল ও মালদ্বীপ) ফুটবলাররা স্থানীয় (বাংলাদেশি) হিসেবে গণ্য হবেন – বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) পেশাদার লিগ কমিটির এই সিদ্ধান্তে দেশের ফুটবল ক্লাবগুলোর মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
গত ২৯ মে বাফুফের সভায় এই সিদ্ধান্ত অনুমোদিত হয় এবং সম্প্রতি ক্লাবগুলোকে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দিয়ে পাঁচজন সার্কভুক্ত ফুটবলারকে স্থানীয় হিসেবে নিবন্ধনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কতজন খেলতে পারবেন তা স্পষ্ট না থাকায়, ধারণা করা হচ্ছে পাঁচজনেরই খেলার সুযোগ থাকছে।
চ্যাম্পিয়ন দল মোহামেডানের ফুটবল ম্যানেজার ও জাতীয় দলের সাবেক তারকা ফুটবলার ইমতিয়াজ আহমেদ নকীব এই সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, "ক্লাবগুলো ফুটবল দল গঠন ও পরিচালনা করে। কিন্তু ক্লাবগুলোর সঙ্গে কোনো রকম আলোচনা ছাড়াই ফেডারেশন সার্কের ৫ ফুটবলারকে স্থানীয় হিসেবে নিবন্ধনের সুযোগ দিয়েছে।" তিনি আরও জানান, আরামবাগ, ফর্টিজ, ফকিরেরপুল, পুলিশ ক্লাবের মতো দলগুলোও এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছে এবং ক্লাবগুলো সম্মিলিতভাবে ফেডারেশনকে তাদের অবস্থান জানাবে।
নকীবের মতে, বাংলাদেশ প্রিমিয়ার ফুটবল লিগে এবার সার্কের বাইরের দেশ থেকে সর্বোচ্চ পাঁচজন বিদেশি ফুটবলার নিবন্ধন করানো যাবে, যার মধ্যে তিনজন একাদশে খেলতে পারবে। এরপর যদি সার্কের ফুটবলাররাও খেলার সুযোগ পায়, তাহলে বাংলাদেশের স্থানীয় ফুটবলারদের জন্য 'ভয়াবহ সংকট' তৈরি হবে। তিনি আশঙ্কা করছেন, "যদি কোনো ক্লাব সার্কের পাঁচজন এবং বাইরের তিনজন বিদেশি নিয়ে খেলে, তাহলে একাদশে আটজনই বিদেশি হয়ে যাবে। এতে স্থানীয় ফুটবলাররা খেলার সুযোগ পাবে না, যা জাতীয় দলের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।"
এছাড়াও, বাফুফের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে আরও প্রশ্ন উঠেছে। যখন রাষ্ট্র সার্কভুক্ত ফুটবলারদের বিদেশি নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দিচ্ছে, সেখানে বাফুফে কীভাবে তাদের স্থানীয় হিসেবে খেলার সুযোগ দিচ্ছে, তা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। ক্লাবগুলোর মতামত না নিয়ে যেমন এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তেমনি সরকার বা ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সঙ্গেও এ বিষয়ে কোনো আলোচনা করা হয়নি।
এদিকে, সার্কের অন্য কোনো দেশ বাংলাদেশি ফুটবলারদের জন্য এমন নিয়ম চালু না করলেও বাফুফের এই 'অতি উৎসাহী মনোভাব' নিয়ে ফুটবলাঙ্গনে কৌতুহল দেখা দিয়েছে। ব্রাদার্স ইউনিয়নের ম্যানেজার আমের খান, যিনি ফুটবলার ও ক্লাবের অধিকার নিয়ে সব সময় সোচ্চার, তিনিও ক্লাবগুলোকে পাশ কাটিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ায় হতাশ। তিনি মনে করেন, "ফুটবলের প্রধান স্টেকহোল্ডার ক্লাব। দেশের ফুটবলের সামগ্রিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে ক্লাবগুলোর সাথে আলোচনা করেই পথচলা দরকার।"
সম্প্রতি বাফুফের বিরুদ্ধে ক্লাবগুলোকে উপেক্ষা করার অভিযোগ উঠেছে। বাংলাদেশ-সিঙ্গাপুর ম্যাচে দেশের শীর্ষ ক্লাবগুলো মাত্র দুটি সৌজন্য টিকিট পেয়েছে, যেখানে এই ক্লাবগুলোই সারা বছর ফুটবল সক্রিয় রাখতে কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করে। তাদের বকেয়া থাকে অংশগ্রহণ ফি ও প্রাইজ মানি, এবং লিগ বা টুর্নামেন্টের নীতি-নির্ধারণী ক্ষেত্রেও তাদের মতামত প্রদানের সুযোগ থাকে না। এমনকি লিগ কমিটি সম্প্রতি প্রিমিয়ার লিগের ক্লাবগুলোর সঙ্গে কোনো সভাই করেনি। গত মৌসুমে মোহামেডান ক্লাব ফিকশ্চার পদ্ধতি ও লিগ কমিটির কার্যক্রম নিয়ে আপত্তি জানালেও সেই সংকট দূর হয়নি, বরং নতুন মৌসুমের শুরুতেই এই নতুন বিতর্ক তৈরি হলো।
সোর্স: জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক