
ছবি : সংগৃহীত
পঞ্চগড়, ৮ জুলাই ২০২৫ – পঞ্চগড় সদর উপজেলার অমরখানা ইউনিয়নে তাস খেলায় বাধা দেওয়ায় নববিবাহিত স্ত্রীকে বিষ খাইয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে স্বামী তছলিম উদ্দীনের বিরুদ্ধে। নিহত শাহিনুর আক্তারের বাবা সাবিরুল মন্ডল ও মা আছমা বেগম দিনাজপুরের পার্বতীপুর থেকে মেয়ের মৃত্যুর খবর শুনে সোমবার (৭ জুলাই) পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে ছুটে আসেন। রাত ১২টা পর্যন্ত তারা হাসপাতালে মেয়ের মরদেহের পাশে অবস্থান করলেও, স্বামী তছলিম উদ্দীনসহ শ্বশুরবাড়ির কাউকে খুঁজে পাননি।
জানা যায়, দেড় মাস আগে শাহিনুর আক্তারের দ্বিতীয় বিয়ে হয় পঞ্চগড় সদর উপজেলার অমরখানা ইউনিয়নের মেহেনাভিটা গ্রামের সাইফুল ইসলামের ছেলে তছলিম উদ্দীনের সঙ্গে। গত ৫ জুলাই সন্ধ্যায় তছলিম উদ্দীন ২৫ হাজার টাকায় কেনা একটি মোবাইল বন্ধক রেখে তাস খেলতে যান। মোবাইল বন্ধক রেখে তাস খেলতে যাওয়ায় শাহিনুর আক্তারের সঙ্গে তার স্বামীর ঝগড়া হয়।
এরপর শাহিনুর তার ভাই আব্দুর রাজ্জাককে মোবাইল করে বিষয়টি জানান এবং বাড়ি যাওয়ার জন্য টাকা চান। রাত হয়ে যাওয়ায় আব্দুর রাজ্জাক সকালে টাকা পাঠানোর কথা বলেন। পরদিন সকালে আব্দুর রাজ্জাককে তছলিম জানান যে শাহিনুর বিষ খেয়েছে এবং হাসপাতালে ভর্তি আছে।
আব্দুর রাজ্জাক জানান, “আমার বোন শনিবার সন্ধ্যায় আমাকে ফোন করে বলে তার মোবাইলটি তছলিম বন্ধক রেখে তাস খেলতে গেছে। বলার পর সে বাড়ি আসার জন্য গাড়ি ভাড়ার টাকা চায়। রাত হওয়ায় আমি সকালে টাকা দিতে চাই। পরে আমি শাহিনুরের শ্বশুরকে রাত ১১টায় ফোন দিয়ে বলি ওরা কি ঝগড়া করছে। তিনি বলেন, না ঝগড়া করে নাই। দুজনেই তছলিমের খালার বাড়িতে বেড়াতে গেছে। পরের দিন সকাল ৯টায় তছলিম ফোন করে জানায় শাহিনুর বিষ খাইছে। রাতে হাসপাতালে ভর্তি হইছে।”
আব্দুর রাজ্জাক আরও বলেন, “পরে শাহিনুরের সঙ্গে মোবাইলে কথা হলে তাকে জিজ্ঞাসা করি বিষ খাইছো কেন। সে বলে, ‘আমি বিষ খাইনি।’ একথা বলার সঙ্গে সঙ্গে ফোনটা তারা নিয়ে কেটে দেয়।”
রাত ১০টার দিকে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে শাহিনুরের বাবা সাবিরুল মন্ডল, মা আছমা বেগম, ছেলে স্বাধীনসহ পরিবারের সদস্যরা লাশ নেওয়ার জন্য হাসপাতালের বারান্দার মেঝেতে বসে অপেক্ষা করছিলেন। এ সময় সাবিরুল মন্ডল বলেন, “আমরা গরিব মানুষ, টাকা না থাকায় গতকাল আসতে পারি নাই। আজকে আসার সময় ফোনে শুনলাম মেয়েটা মারা গেছে। হাসপাতালে এসে দেখি জামাইসহ শ্বশুরবাড়ির কেউ নাই। সবাই মেয়েটাকে ফেলে পালিয়ে গেছে।”
শাহিনুরের মা আছমা বেগম বলেন, “আমার মেয়ের বিয়ে হওয়ার একমাস পার হলো। আমার মেয়ে তাস খেলায় বাঁধা দেওয়ায় তাকে বিষ খাওয়ায়ে মেরে ফেলছে। আমি এর বিচার চাই।”
পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. আবুল কাশেম জানান, শাহিনুর নামের একজন রোগী শনিবার রাত ১১টা ৩০ মিনিটে কীটনাশক পান করে হাসপাতালে ভর্তি হন। “হাসপাতালে আমরা ওয়াশ করে দিয়েছি। পরবর্তীতে রোগীর অবস্থা খারাপ হলে আমরা তাকে রেফার্ড করি। রোগীর লোকজন অন্যত্র তাকে নিতে আগ্রহী না হওয়ায় সে এখানে চিকিৎসাধীন ছিল। আজকে আরও তার অবস্থার অবনতি হলে সকাল সাড়ে ১১টার দিকে সে মারা যায়।”
পঞ্চগড় সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লা হিল জামান বলেন, “এ ঘটনায় থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে।”