ছবি : সংগৃহীত
বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মো. তৌকির ইসলাম আজ তাঁর জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সলো ফ্লাইট ট্রেনিং সম্পন্ন করতে গিয়ে এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন। বিমান বাহিনীর একজন প্রতিশ্রুতিশীল পাইলট তৌকিরের এই ট্রেনিং ছিল একজন ফাইটার পাইলট হিসেবে তাঁর যোগ্যতার চূড়ান্ত পরীক্ষা। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে, এই ট্রেনিং ফ্লাইটই হয়ে দাঁড়ায় তাঁর শেষ উড্ডয়ন।
সলো ফ্লাইট ট্রেনিং একজন পাইলটের ক্যারিয়ারের সবচেয়ে গর্বের মুহূর্ত। এই ট্রেনিংয়ে পাইলটকে কোনো নেভিগেটর বা ইন্সট্রাক্টর ছাড়াই একাই বিমান চালাতে হয়। ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলাম (বিএএফএ ৭৬তম ব্যাচ) আজ সকালে কুর্মিটোলা এয়ার বেস থেকে এফ-৭বিজি প্রশিক্ষণ বিমান নিয়ে আকাশে উড়েছিলেন। তাঁর ফ্লাইট পাথ ছিল উত্তরা, দিয়াবাড়ি, বাড্ডা, হাতিরঝিল এবং রামপুরা জুড়ে।
কিন্তু আকাশে ওঠার কিছুক্ষণের মধ্যেই বিমানে টেকনিক্যাল গোলযোগ দেখা দেয়। তৌকির কন্ট্রোল রুমকে জানান, তাঁর বিমান সঠিকভাবে উড়ছে না এবং ধীরে ধীরে নিচের দিকে নামছে। কন্ট্রোল রুম থেকে তাঁকে অবিলম্বে ইজেক্ট করার নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু তৌকির শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়াই করে গেছেন তাঁর প্রিয় বিমানটি বাঁচানোর জন্য।
সূত্রে জানা গেছে, তৌকির বিমানের সর্বোচ্চ গতি বাড়িয়ে বেসের দিকে ফিরে আসার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু বিমানটি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে এবং উত্তরের দিয়াবাড়িতে অবস্থিত মাইলস্টোন স্কুলের একটি ভবনের ওপর আছড়ে পড়ে। ভয়াবহ বিস্ফোরণের পর বিমান এবং ভবনটি আগুনে ধরে যায়। তৌকিরকে উদ্ধার করে সামরিক হাসপাতালে নেওয়া হলেও গুরুতর পোড়া জখমে তাঁর মৃত্যু হয়।
এই দুর্ঘটনায় সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো—বিমানটি কেন হঠাৎ নিয়ন্ত্রণ হারালো? প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, ইঞ্জিন ফেইলিওর বা ফ্লাইট কন্ট্রোল সিস্টেমে ত্রুটির কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। তবে সঠিক কারণ জানতে বিমান বাহিনী একটি উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলাম ছিলেন বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একজন মেধাবী ও সাহসী পাইলট। তাঁর মৃত্যু শুধু একটি পরিবারকে শোকস্তব্ধ করেনি, পুরো জাতিকে কাঁদিয়েছে। বিমান বাহিনী জানিয়েছে, তৌকিরকে সর্বোচ্চ সামরিক সম্মাননা দিয়ে শেষ বিদায় জানানো হবে।
এই দুর্ঘটনায় স্কুলের অসংখ্য শিক্ষার্থী ও শিক্ষকও মর্মান্তিক ভাবে নিহত ও আহত হয়েছেন। আহতদের চিকিৎসার জন্য রক্তের জরুরি প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। সাধারণ মানুষকে রক্তদান ও সহযোগিতার হাত বাড়ানোর আহ্বান জানানো হয়েছে।
ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলাম শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তাঁর দায়িত্ব পালন করে গেছেন। একজন পাইলট হিসেবে তিনি প্রমাণ করেছেন, তিনি শুধু আকাশে উড়তেন না—আকাশকে জয় করেছিলেন। আজ সেই আকাশই তাঁকে চিরবিদায় জানাল।