
ছবি : সংগৃহীত
ইসরায়েলের পার্লামেন্ট কনেসেট একটি বিতর্কিত ঘোষণামূলক প্রস্তাব অনুমোদন করেছে, যাতে পশ্চিম তীর ও জর্ডান উপত্যকার ওপর “ইসরায়েলি সার্বভৌমত্ব প্রয়োগের” আহ্বান জানানো হয়েছে। এই প্রস্তাবটি ৭১ জন সংসদ সদস্যের সমর্থনে পাস হয়েছে, যেখানে বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন মাত্র ১৩ জন ।
প্রস্তাবটিতে দাবি করা হয়েছে যে অধিকৃত পশ্চিম তীর ‘ইহুদি জনগণের ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক ও আধ্যাত্মিক মাতৃভূমির অবিচ্ছেদ্য অংশ’ । হেবরন, নাবলুস, শিলোহ ও বাইত এলের মতো শহরগুলোকে ‘ইসরায়েলে ইহুদি উপস্থিতির ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতার প্রমাণ’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে ।
প্রস্তাবে আরও যুক্তি দেখানো হয়েছে যে, ৭ অক্টোবরের হামলা প্রমাণ করে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ইসরায়েলের অস্তিত্বের জন্য হুমকি হতে পারে এবং তা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা নষ্ট করবে । এতে বলা হয়েছে, “ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের ধারণা নেসেটের আলোচ্যসূচি থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে” ।
যদিও এই প্রস্তাবের কোনো আইনি বাধ্যবাধকতা নেই, তবুও বিশ্লেষকরা মনে করছেন এটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক বার্তা বহন করে । প্রস্তাবটি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন জোটের পক্ষ থেকে উত্থাপন করা হয় এবং ভবিষ্যতে পার্লামেন্টে এই ইস্যু নিয়ে আরও আলোচনার পথ খুলে দেয় ।
প্রস্তাবটির সূচনা করেছিলেন ইসরায়েলের কট্টর ডানপন্থি অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ, যিনি নিজেও একটি অবৈধ ইসরায়েলি বসতিতে বাস করেন ।
এই প্রস্তাবের পর দেখা যায় ব্যাপক আন্তর্জাতিক নিন্দা।
ইরানি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, “ইহুদিবাদী সরকার তার নৃশংস এজেন্ডায় কোনো সীমানা স্বীকার করে না, জাতিসংঘের প্রস্তাব এবং আন্তর্জাতিক আইনকে স্পষ্টভাবে উপেক্ষা করে” ।
লেবাননের হিজবুল্লাহ এই পদক্ষেপকে “সব ধরনের আন্তর্জাতিক দায়িত্ব ও আইনের লঙ্ঘন” বলে উল্লেখ করেছে ।
সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ ১২টি দেশের যৌথ বিবৃতিতে এই সিদ্ধান্তকে “আন্তর্জাতিক আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন” বলা হয়েছে ।
তারা যেকোনো ধরনের দখলদারিত্ব-সংক্রান্ত উদ্যোগকে জোরালোভাবে প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, “এগুলো উপনিবেশবাদী পদক্ষেপ, যা পশ্চিম তীরে বর্ণবৈষম্য বা ‘আপারথেইড’ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করছে” ।
১৯৬৭ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের পর পশ্চিম তীর, পূর্ব জেরুজালেম ও গাজা উপত্যকা দখল করে নিয়েছিল ইসরায়েল । জর্ডান উপত্যকা অধিকৃত পশ্চিম তীরের পূর্ব অংশে অবস্থিত একটি কৌশলগত ও উর্বর অঞ্চল, যা প্রায় ১০ হাজার বর্গকিলোমিটারজুড়ে বিস্তৃত ।
২০২৪ সালের জুলাইয়ে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) ইসরায়েলের ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড দখলকে অবৈধ ঘোষণা করেছিল এবং অধিকৃত পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমের সব বসতি খালি করার আহ্বান জানিয়েছিল ।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই পদক্ষেপ দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের ভবিষ্যৎকে আরও দুর্বল করে দিতে পারে। ফিলিস্তিনি নেতৃত্ব চায়, ভবিষ্যতের ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রে পশ্চিম তীর, গাজা ও পূর্ব জেরুজালেম অন্তর্ভুক্ত হোক, কিন্তু পশ্চিম তীর দখল করে নিলে এমন একটি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠন প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে ।
এই প্রস্তাব মধ্যপ্রাচ্যের ইতিমধ্যেই উত্তপ্ত পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে।