উত্তরপ্রদেশে উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের রড হামলায় মুসলিম ছাত্র আরিশ খানের মৃত্যু: সাম্প্রদায়িক সহিংসতার নতুন মাত্রা

নিজেস্ব প্রতিবেদক

ছবি : সংগৃহীত

ভারতের উত্তরপ্রদেশের ফতেহপুরে উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের নির্মম হামলায় দ্বাদশ শ্রেণির মুসলিম ছাত্র আরিশ খান মৃত্যুবরণ করেছেন। স্থানীয় সময় বিকেলে মহর্ষি বিদ্যা মন্দির স্কুলের বাইরে একদল হিন্দুত্ববাদী সমর্থক তাকে রড দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে। এই ঘটনায় পুরো দেশজুড়ে ক্ষোভ ও নিন্দার ঝড় উঠেছে।

জানা যায়, স্কুল থেকে ফেরার পথে আরিশ খানকে তিনজন স্কুটার আরোহী উগ্রবাদী লক্ষ্য করে রড দিয়ে আক্রমণ করে। পরে আরও কিছু হিন্দুত্ববাদী দলবদ্ধ হয়ে তাকে একের পর এক আঘাত করতে থাকে।মাটিতে লুটিয়ে পড়ার পরও তারা আরিশকে মারধর চালিয়ে যায়, যার ফলে সে গুরুতর আহত হয়। স্থানীয় হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
মূলত স্কুলে তর্ক-বিতর্কের জেরে এই ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে। তবে, আরিশের পরিবার ও স্থানীয় মুসলিম সম্প্রদায়ের দাবি, ধর্মীয় বিদ্বেষই এই হত্যার মূল কারণ, কারণ তর্কে জড়িত অন্যান্য হিন্দু ছাত্রদের কোনো ক্ষতি করা হয়নি।

এই ঘটনা বিজেপি-সমর্থিত উগ্র হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীগুলোর ক্রমবর্ধমান সন্ত্রাসেরই প্রতিফলন। গত কয়েক বছরে উত্তরপ্রদেশসহ সমগ্র ভারতে মুসলিমদের বিরুদ্ধে সহিংসতা, লিঞ্চিং ও ঘৃণামূলক অপরাধ বেড়েছে ।
স্কুল থেকে প্রশাসন পর্যন্ত মুসলিম বিদ্বেষ এখন প্রকাশ্য। সম্প্রতি উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের বক্তব্যেও সংখ্যালঘুদের প্রতি বৈষম্যমূলক নীতির ইঙ্গিত মেলে ।
গরু রক্ষা, লাভ জিহাদ ও ধর্মান্তরণের মিথ্যা অভিযোগে মুসলিম যুবকদের ওপর হামলা এখন নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে। জাতিসংঘের রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২০-২০২৫ সময়কালে ভারতে ধর্মীয় সহিংসতার শিকার ৮৫% ভুক্তভোগীই মুসলিম।

মানবাধিকার সংস্থাগুলো এই হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “মোদী সরকারের নীরবতাই উগ্রবাদীদের প্রশ্রয় দিচ্ছে”।
পাকিস্তান ও তুরস্ক ভারতের মুসলিমদের ওপর নির্যাতনের বিষয়টি জাতিসংঘে তুলে ধরার ঘোষণা দিয়েছে।

আরিশ খানের মৃত্যু শুধু একটি হত্যাকাণ্ড নয়, এটি হিন্দুত্ববাদী ফ্যাসিবাদের একটি ভয়াবহ প্রকাশ। যতদিন পর্যন্ত ভারত সরকার সংখ্যালঘুদের সুরক্ষায় কঠোর পদক্ষেপ না নেবে, ততদিন এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি অব্যাহত থাকবে। বিশ্ব সম্প্রদায়ের এখনই এই ইস্যুতে সোচ্চার হওয়া প্রয়োজন।

সম্পর্কিত খবর

এই পাতার আরও খবর

সর্বশেষ