যুক্তরাষ্ট্র-ইউরোপ বাণিজ্য চুক্তি: ট্রাম্পের ‘রাজনৈতিক বিজয়’ নাকি ইউরোপের কৌশলগত পরাজয়

নিজেস্ব প্রতিবেদক

ছবি : সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) মধ্যে সম্প্রতি স্বাক্ষরিত ১৫% শুল্ক চুক্তি নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। বিশ্লেষকরা এটিকে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কূটনৈতিক সাফল্য হিসেবে দেখলেও ইউরোপের জন্য এটি একটি অসম চুক্তি বলে মনে করা হচ্ছে, যা দীর্ঘমেয়াদে তাদের অর্থনীতিকে চাপে ফেলতে পারে ।

চুক্তির মূল শর্তাবলী গুলো হলো-
শুল্ক কাঠামো: ইউরোপীয় পণ্যে ১৫% শুল্ক বসানো হয়েছে, যা ট্রাম্পের পূর্বঘোষিত ৩০% এর অর্ধেক। তবে স্টিল ও অ্যালুমিনিয়ামে ৫০% শুল্ক বহাল রাখা হয়েছে, যা ইউরোপের শিল্পখাতের জন্য বড় ধরনের ক্ষতির কারণ হবে ।
-ওষুধ ও সেবাখাত: ট্রাম্প ২০০% শুল্কের হুমকি দিলেও চুক্তিতে ওষুধে শুল্ক ১৫% নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে সেবাখাত (যা ট্রান্সঅ্যাটলান্টিক বাণিজ্যের ৪০% অংশ) সম্পূর্ণ উপেক্ষিত, যা ইউরোপের জন্য বড় ধরনের সুযোগহানি ।
জ্বালানি ও অস্ত্র ক্রয়: ইউরোপ ৭৫০ বিলিয়ন ডলারের মার্কিন জ্বালানি (এলএনজি, তেল) এবং শত শত বিলিয়ন ডলারের সামরিক সরঞ্জাম কিনতে সম্মত হয়েছে। তবে এগুলোর কোনো বাস্তব সময়সীমা বা জবাবদিহিতা নেই, যা ইউরোপকে দীর্ঘমেয়াদে নির্ভরশীল করে তুলতে পারে ।
-যুক্তরাষ্ট্রে বিনিয়োগ: ইইউ ৬০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিলেও, এটি বাধ্যতামূলক নয় এবং এর বাস্তবায়ন নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে ।

ফ্রান্স ও জার্মানির মিশ্র প্রতিক্রিয়ায় দেখা যায় , ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী ফ্রাঁসোয়া বেইরো চুক্তিকে “ইউরোপের আত্মসমর্পণ” বলে আখ্যা দিয়েছেন, অন্যদিকে জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্জ একে “বাণিজ্যযুদ্ধ এড়ানোর উপায়” হিসেবে দেখছেন ।

অটোমোবাইল শিল্পের উপর প্রভাব: জার্মান গাড়ি নির্মাতারা (ভক্সওয়াগেন, বিএমডব্লিউ) ১৫% শুল্কের কারণে মার্কিন বাজারে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়তে পারেন, যা ইউরোপের রপ্তানি নির্ভর অর্থনীতির জন্য বড় ঝুঁকি ।
রাশিয়ার জ্বালানি নির্ভরতা কমাতে চাপ: ইউরোপকে *মার্কিন জ্বালানিতে বিনিয়োগ করতে বাধ্য করা হচ্ছে, যা রাশিয়ার উপর থেকে নির্ভরতা কমালেও যুক্তরাষ্ট্রের শক্তি নীতির কাছে ইউরোপকে জিম্মি করে তুলছে

ট্রাম্প এই চুক্তিকে তার “আমেরিকা ফার্স্ট” নীতির জয় হিসেবে প্রচার করছেন এবং দাবি করছেন যে এটি যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি কমাবে।

ব্রাসেলসভিত্তিক বিশ্লেষক পাওলো রাফোনে বলেছেন, “ইউরোপ কোনো কৌশলগত পরিকল্পনা ছাড়াই আলোচনায় গিয়েছিল, ফলে তাদের শর্ত মেনে নিতে হয়েছে”।

বিশ্লেষকরা বলছেন ,ইউরোপের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। এই চুক্তি ট্রাম্পের জন্য একটি রাজনৈতিক সাফল্য হলেও ইউরোপের অর্থনীতির জন্য দীর্ঘমেয়াদী ঝুঁকি তৈরি করেছে। শিল্পখাতের উপর অতিরিক্ত শুল্ক, জ্বালানি ও অস্ত্র ক্রয়ের অনিশ্চয়তা এবং সেবাখাতের অবহেলা ইউরোপকে ভবিষ্যতে আরও বড় সংকটে ফেলতে পারে। এখন প্রশ্ন হলো— ইউরোপ কি ট্রাম্পের চাপে আরও ছাড় দিতে বাধ্য হবে, নাকি ভবিষ্যতে পাল্টা কৌশল নেবে?

সম্পর্কিত খবর

এই পাতার আরও খবর

সর্বশেষ